বহরমপুর: বেহাল রাস্তার কারণে দুর্ঘটনার খবর তো প্রায়ই শোনা যায়। সম্প্রতি হবিবপুরে বেহাল রাস্তার কারণে খাটিয়াতে করে হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যুর খবর শিরোনামে এসেছিল। নতুন করে একই ঘটনার শিকার হলেন রাধাবিনোদ ঘোষ (৬৬)। ঘটনাটি মুর্শিদাবাদের লালবাগ মহকুমার অন্তর্গত নবগ্রাম এলাকায়।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার রাতে। রাধাবিনোদ বুকে ব্যথা অনুভব করায়, পরিবারের লোকজন অ্যাম্বুল্যান্সকে খবর দেন। কিন্তু তখনও তাঁর পরিবারের লোকজন জানতেন না পরিণতি কী হবে। সারারাত কষ্ট পেয়ে ওই শিক্ষকের মৃত্যু হয় রবিবার সকালে। যার বাড়িতে সুস্থ্ হয়ে ফেরার কথা, তাঁকে গ্রামবাসীরা কাঁধে করে বহন করে সৎকারের ব্যবস্থা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মিনতি দাস অভিযোগ করে বলেন, ‘এমন ঘটনা চিন্তা করে শিউরে উঠতে হচ্ছে আমাদের। সকলের চোখের সামনে একজন মানুষ চিকিৎসার অভাবে যন্ত্রণায় ছটফট করল। অথচ অ্যাম্বুল্যান্স রাস্তার বেহাল অবস্থার জন্য গ্রামে প্রবেশ করতে পারল না।’
রাধাবিনোদ চানক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করতেন। শনিবার রাতে বুকে ব্যথা উঠলে তাঁকে স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সাহায্যে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশীরাও। তাঁর বাড়ি থেকে গ্রামীণ হাসপাতাল প্রায় ২.৫ কিলোমিটার দূরে। ফোন করা হয় অ্যাম্বুল্যান্সকে। তারপর শুরু হয় লড়াই, রাতভর চেষ্টা করেও অ্যাম্বুল্যান্স দুর্গম রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছাতে পারেনি রোগীর বাড়িতে। বাধ্য হয়েই গাড়িটি ফিরে যায়। এরপর বাড়িতে চিকিৎসা না পেয়ে, কয়েক ঘণ্টা পর মৃত্যু হয় ওই ব্যাক্তির। এবিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রূপলাল মণ্ডল দাবি করেন, ‘এমন ঘটনা আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয়রা জানিয়েছে, একদিকে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থা। সেইসঙ্গে তীব্র বৃষ্টির ফলে গ্রামের ভাঙা মাটির রাস্তা কাদার জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। যে কোনও দরকারে হাঁটুকাদা পেরিয়ে যেতে হয় গন্তব্যস্থলে।
মৃতের এক আত্মীয় বলেন ‘দুর্গম এই পথ পেরিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স এসে পৌঁছাতে পারল না। অকারণে প্রাণ গেল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে হয়ত বাঁচানো যেত।’ রবিবার সকালে গ্রামবাসীরা এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রাস্তা সংস্কারের দাবি জানানো হয়। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক অপূর্ব সরকার। তিনি জানিয়েছেন, এই মৃত্যু মর্মান্তিক। রাজ্য সরকার সর্বত্র পথশ্রীর মাধ্যমে রাস্তার উন্নয়ন করেছে বলে তাঁর দাবি। এক্ষেত্রে কী হয়েছে তিনি খবর নেবেন।