BDO | লাভাকে প্লাস্টিকমুক্ত করে সেরার শিরোপা ভারতীর

BDO | লাভাকে প্লাস্টিকমুক্ত করে সেরার শিরোপা ভারতীর

ব্লগ/BLOG
Spread the love


শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা : উত্তরবঙ্গের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ‘লাভা’কে প্লাস্টিকমুক্ত করে রাজ্যের অন্যতম সেরা বিডিওর খেতাব পেলেন ভারতী চিকবড়াইক। মেটেলির কন্যা ভারতীর ওই কৃতিত্বে এখন খুশির হাওয়া ডুয়ার্সেও। মঙ্গলবার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের তরফে কলকাতার বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে মোট চারটি ক্যাটিগোরিতে অসাধারণ পারফরমেন্সের জন্য সেরা বিডিওদের বেছে নেওয়া হয়। তাতে প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার নিরিখে ভারতীর হাতে ওই পুরস্কার তুলে দেন দপ্তরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, ‘লাভার বিডিওর কাজ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। রাজ্য সরকারের পরিবেশ ভাবনা সহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজকে তিনি যে নিজের কর্মদক্ষতায় আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন সেই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।’

ভারতী বলেন, ‘লাভা বর্তমানে প্লাস্টিকমুক্ত এলাকা। সরকারিভাবে আগামী ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা ঘোষণা করা হবে। যে কোনও পুরস্কার কাজের প্রতি দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। ভবিষ্যতেও নিজের সেরাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করব।’

বছর দেড়েক আগে রংলি রংলিয়েট-তাকদা ব্লক থেকে বদলি হয়ে লাভায় এসে ভারতী প্রথম নজর দেন পর্যটনকেন্দ্রটিকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে। সেইমতো কাজ শুরু করেন। সবার আগে ২০২৪-এর ২ অক্টোবর শিলংয়ের মাওলিননংয়ের ধাঁচে ব্লকের পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয় আপার দোলাপচাঁদকে। রাজ্য সরকার ও কালিম্পং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এরপর গীতডাবলিংয়ে চালু হয় প্লাস্টিকজাত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট। সমস্যা দেখা দেয়, প্লাস্টিকের জোগান নিয়ে। ভারতীর উদ্যোগেই এজন্য কাজে লাগানো হয় স্থানীয় মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্লাস্টার বা সংঘকে। ওই মহিলারা বাড়ি, হোটেল, দোকান, রেস্তোরাঁ, হাটবাজারে ঘুরে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সংগ্রহ করার পর তা প্রসেসিং ইউনিটে পাঠাতে শুরু করেন। এজন্য লাভার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি বিধিও পাশ করিয়ে নেওয়া হয়। লাভাজুড়ে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত প্লাস্টিক বা অন্য আবর্জনা যাতে এক জায়গায় ফেলা হয় এজন্য পিট তৈরি করে দেওয়া হয়। প্লাস্টিক ব্যবহারের কুফল নিয়ে স্থানীয় স্কুল, ক্লাব, ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানো হয় ধারাবাহিকভাবে।

লাভা থেকে সংগৃহীত প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে প্রসেসিং ইউনিটে তৈরি হচ্ছে ইকো ইট। তা কাজে লাগানো হচ্ছে পর্যটনকেন্দ্রগুলির উন্নয়নে। যেমন কোথাও বানিয়ে দেওয়া হয়েছে বসার জায়গা। আবার কোথাও পাহাড়ের খাঁজে লাগিয়ে সৌন্দর্যায়ন করা হচ্ছে। হোমস্টেগুলিও ওই ইকো ইট সংগ্রহ করে সেগুলিকে কাজে লাগাতে পারে। পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে ৫ টাকা করে প্রতি ইট বিক্রি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

দেশের মধ্যে হোমস্টের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কালিম্পং জেলাতেই। লাভাতেই রয়েছে প্রায় আড়াইশো হোমস্টে। ভারতী জানতেন, শুধু প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেই তাঁর ভাবনা সফল হবে না। প্লাস্টিকের বিকল্পও তুলে দিতে হবে মানুষের হাতে। তাই তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী, গোড়াতেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে মোট ৫৯টি ‘স্বচ্ছতাসাথী’ নামে দল তৈরি করে প্রতিটি বাড়ি থেকে পুরোনো কাপড় সংগ্রহের কাজ শুরু হয় ব্লকজুড়ে। তা দিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্লাস্টারের স্টিচিং ইউনিট বা স্কুল পড়ুয়াদের ইউনিফর্ম তৈরির কারখানায় কাপড়ের ব্যাগও তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি মহিলারা বানাচ্ছেন কাগজের ব্যাগও। এজন্য তাঁদের প্রশাসনের তরফে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। গীতডাবলিংয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে ভুট্টার স্টার্চের ব্যাগ। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি সেগুলি কিনে নিয়ে কিছু লাভ রেখে বাজারে বিক্রি করছে। সব মিলিয়ে প্লাস্টিকের বিকল্প আয়ের উৎস তৈরি হওয়ায় গোটা ব্লককে প্লাস্টিকমুক্ত করার পরিকল্পনা সফল হয়েছে।

ভারতীর বাড়ি মেটেলি বাজারে। পড়াশোনা বিন্নাগুড়ির সেন্ট জেমস স্কুলে। মেয়ের  কৃতিত্বে চোখে জল বাবা কপিল চিকবড়াইকের। ভারতী বিভিন্ন সময়ে সরকারি আধিকারিক হিসেবে কাজ করেছেন নাগরাকাটা, দিনহাটা-১ ব্লক ও আলিপুরদুয়ারে। দার্জিলিং জেলার রংলি রংলিয়েট-তাকদা ব্লকে তিন বছর বিডিওর দায়িত্ব সামলানোর পর এখন লাভাকে নতুন রূপ দেওয়ার অন্তরাত্মা তিনিই।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *