সুবীর মহন্ত, বালুরঘাট: ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও চার নাবালিকার এখনও কোনও খোঁজ মেলেনি। স্বভাবতই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে ওই পরিবারগুলি। যদিও হাল ছাড়েনি বালুরঘাট থানার পুলিশ। মোবাইলের সূত্র ধরে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি জারি রেখেছে পুলিশ। বালুরঘাট থানার আইসি সুমন্ত বিশ্বাস জানান নিখোঁজ নাবালিকাদের খোঁজ চলছে।
উল্লেখ্য, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বালুরঘাটের (Balurghat) ৪ জন নাবালিকা অন্তর্ধান হয়েছিল। যা নিয়ে বাড়ছে রহস্য। এদের মধ্যে একই বাড়ির দুই বোনও নিখোঁজ হয়েছিল।
বাল্যবিবাহ বা পাচার রুখতে পথে নেমেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। অথচ প্রান্তিক জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরে শিশু, নারী পাচার বা বিয়ের প্রলোভন দিয়ে অপহরণ করার ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। তিন পরিবারের তরফে ৪ নাবালিকা নিখোঁজ অভিযোগ পেয়ে মামলা রুজু করে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তিন পরিবারই তাদের মেয়েদের নিখোঁজের পিছনে অপহরণকারীদের বা পাচারচক্রের হাতের অভিযোগ তুলেছে।
বালুরঘাট ব্লকের ডাঙাগ্রাম পঞ্চায়েতের এক প্রত্যন্ত গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করা বোন একসঙ্গে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। পরিবারের দাবি, পাশের পাড়ার বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে ওই দুই ছাত্রী বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। এরপর থেকেই ওই দুই বোনের আর কোনও খোঁজ মিলছে না। ওই দুই নাবালিকার বাবা সামান্য দিনমজুর। মা বিড়ি শ্রমিক। একসঙ্গে দুই মেয়ের এমন অন্তর্ধানে ওই পরিবারে নেমে এসেছে দুঃশ্চিন্তার ছায়া।
নিখোঁজ দুই নাবালিকার মায়ের অভিযোগ, ‘আমার মেয়েদের নিশ্চয়ই পাচার করা হয়েছে। ভিনরাজ্যে কর্মরত এক তরুণের উপরও আমাদের সন্দেহ রয়েছে। আমার মেয়েরা বিপদে পড়ার আগেই তাদের উদ্ধার করার দাবি নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।’
এদিকে, গত রবিবারেই বালুরঘাট ব্লকের আরও দুই নাবালিকা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। বালুরঘাট ব্লকের অপর একটি গ্রামের এক দশম ছাত্রী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য বেরিয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। সম্ভাব্য সমস্ত স্থানে খুঁজেও ওই নাবালিকার কোনও হদিস মেলেনি। ওই নাবালিকার বাবার অভিযোগ, ‘অসৎ উদ্দেশ্যেই কেউ বা কারা আমার মেয়েকে অপহরণ করেছে।’
মালঞ্চার এক প্রত্যন্ত এলাকার আরেকজন ১৪ বছর বয়সি নাবালিকাও রাতে নিজের ঘর থেকেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। তার মায়ের দাবি, ‘রাত নটার দিকে নিজের ঘরে ঘুমোতে গিয়েছিল মেয়ে। গভীর রাতে বাথরুমে যাবার নাম করে বেরিয়েছিল। এরপর থেকে আর কোনও হদিস মেলেনি।’
তিনদিক বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ঘেরা দক্ষিণ দিনাজপুরে নারী পাচারচক্র (Ladies trafficking) বরাবরই সক্রিয়। বিশেষ করে বিয়ে বা কাজের টোপ দিয়ে দালালরা একাধিকবার জেলার কিশোরী ও তরুণীদের পাচার করে দিয়েছে ভিনরাজ্যে। স্থানীয় দালালরাই পান্ডাদের হয়ে মেয়ে ‘শিকার’ করে।