Balurghat | রাখি বন্ধনে বালুরঘাট পুরসভায় বৃহন্নলারা! দিলেন ভ্রাতৃত্বের বার্তা

Balurghat | রাখি বন্ধনে বালুরঘাট পুরসভায় বৃহন্নলারা! দিলেন ভ্রাতৃত্বের বার্তা

ভিডিও/VIDEO
Spread the love


বালুরঘাট: সাধারণত কারও বাড়িতে সন্তান জন্ম নিলে তাদের যেতে দেখা যায়। অথবা বিয়ে বাড়িতেও উৎসবের আমেজে দেখা যায় তাদের। কিন্তু রাখির দিন দল বেঁধে তারা হাজির হলেন বালুরঘাট পুরসভায় (Balurghat Municipality)। শনিবার সকালে একদল বৃহন্নলাকে পুরসভার দপ্তরের দেখে প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন কর্মী ও আধিকারিকরা। তারপরেই অনুমতি নিয়ে ঢুকে পড়েন সটান পুরসভার চেয়ারম্যানের ঘরে। কিন্তু উৎসবে অর্থ উপার্জনের আশায় নয়। বরং তাকে ভাতৃত্বের বন্ধনে জড়িয়ে ফেলতেই তাদের এই উদ্যোগ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ এমনকি লিঙ্গ নির্বিশেষেও এই রাখি বন্ধনে খুশি সকলে।

বালুরঘাটে রাখি পূর্ণিমার সকালটা এবারে একটু অন্যরকম হল। বালুরঘাট শহরের খিদিরপুর এলাকায় মূলত বাস বৃহন্নলাদের। সাধারণত কারও বাড়িতে সন্তান জন্মালে বা বিয়ের বাড়ির উৎসবে তাদের দেখা যায়। কিন্তু শনিবার সকালেই বালুরঘাট পুরসভার দপ্তরে হঠাৎই হাজির হলেন তাঁরা। চেনা ছবি নয় বলেই প্রথমে খানিকটা চমকে গিয়েছিলেন দপ্তরের কর্মী ও আধিকারিকরা। সকালের ব্যস্ত অফিসের মধ্যে এমন আগমনে কৌতূহল ছড়িয়ে পড়ল এদিন চারদিকে। চেয়ারম্যানের ঘরের সামনে অপেক্ষা করতে দেখে কানাঘুষো শুরু হয়েছে তখন। কিন্তু খুব শিগগিরই বোঝা গেল, এ কোনও অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে আগমন নয়। হাতে রঙিন রাখি, মুখে উজ্জ্বল হাসি নিয়ে ঢুকে পড়লেন পুরসভার চেয়ারম্যানের ঘরে তারা। অনুমতি নিয়ে চেয়ারম্যান অশোক মিত্রকে রাখি পরিয়ে দিলেন তারা। চেয়ারম্যানের মাথায় ধান, দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদও করেন তারা। সঙ্গে চলতে থাকে মঙ্গল উলুধ্বনি। গলায় মিষ্টি কথায় ভরিয়ে তুললেন ‘ভাইয়ের’ প্রতি শুভেচ্ছা। সমাজ যাদের প্রায়শই উপেক্ষা করে, সেই মানুষদের সঙ্গে রাখি পূর্ণিমা উদযাপন করে মানবিকতার বার্তা এদিন ছড়িয়ে পড়ল বালুরঘাটে। বৃহন্নলাদের হাত থেকে রাখি পরে ও তাদের হাতে রাখি পরিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন যেন আরও দৃঢ় হলো এদিন। বর্তমান সময়ে বিভেদের প্রবণতার মধ্যে এই পদক্ষেপ সমাজে ঐক্য ও সমতার এক অভিনব দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বলে মত পুরসভার কর্মীদের। বৃহন্নলাদের সঙ্গে রাখি উৎসবে মেতে ওঠেন পুরসভার কর্মীরাও। এক সময় যে অফিস ফাইলের শব্দে গমগম করছিল। সেখানে এদিন ভেসে এসেছে হাসি ও আনন্দের রোল।

‘আমরা চাই সমাজে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও মজবুত হোক। কোনও উৎসবে, আনন্দে আমরা যে পিছিয়ে নেই, তাই এদিন প্রমাণ করলাম। জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা লিঙ্গ কিছুতেই যেন বিভাজন না থাকে,’ বললেন দলের অন্যতম সদস্য চম্পা।

আরেক বৃহন্নলা পারুলের কথায়, ‘এদিন রাখি পরানোর পরিকল্পনা আগে থেকেই করে রেখেছিলাম আমরা। রাখি শুধু রক্তের সম্পর্কের বাঁধন নয়। মানুষের মধ্যে বিশ্বাস ও ভালবাসার সম্পর্কের প্রতীক। সেই বার্তাই আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই সমাজের সর্বস্তরে।’

চেয়ারম্যান অশোক মিত্র এই উদ্যোগে মুগ্ধ। তিনি বলেন, ‘এটা ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। রাখি উৎসবের প্রকৃত তাৎপর্য এখানেই। ভেদাভেদ ভুলে মিলেমিশে থাকা আসল ভ্রাতৃত্ববোধকে জাগিয়ে তোলে। এই সমাজে তাদেরও সমান অধিকার রয়েছে। সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে আত্মিক যোগাযোগ এই ভাবেই শক্তিশালী হবে। আজকের এই মুহূর্ত আমাদের সমাজের জন্য প্রেরণাদায়ক।’

এদিনের ঘটনা যেনপ্রমাণ করল রাখি পূর্ণিমা শুধু ভাই-বোনের সম্পর্কের দিন নয়। এটি হতে পারে সমাজে ঐক্যের প্রতীকও। বালুরঘাট পুরসভায় বৃহন্নলাদের এই আগমন যেন নতুন করে মনে করিয়ে দিল মানুষে মানুষে ভালবাসা ও বন্ধনের বাঁধনই শ্রেষ্ঠ। সমাজের প্রতিটি স্তরে এই বার্তা পৌঁছোক, এমনই প্রত্যাশা নিয়ে এদিন পুরসভা ভবন ছাড়েন বৃহন্নলারা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *