সুবীর মহন্ত, বালুরঘাট: জলের মধ্যেই গড়ে উঠেছে আস্ত এক শহর। যাতায়াতের রাস্তাও সেই জল। গণ্ডলায় (চলাচলের ছোট নৌকা) চেপে ইতালীয় ভাষায় গান শুনতে শুনতে গন্তব্যে পৌঁছান ভেনিস শহরবাসী। আবার পর্যটকেদের জন্যেও রয়েছে সেই ব্যবস্থা। কিন্তু সেই আনন্দ পেতে যে ভালোরকম ট্যাঁকের কড়ি খরচ করতে হবে তা বলাই বাহুল্য। এবার গৌড়বঙ্গবাসীকে ভেনিস শহরের গণ্ডলার সেই আনন্দ দিতে চলেছে বালুরঘাট (Balurghat)। বালুরঘাট ডাঙা খাঁড়িকে ভেনিসের জলপথের আদলে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছে বালুরঘাট পুরসভা (Balurghat Municipality)।
গার্ডওয়ালের পর, এবার খাঁড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাৎসরিক আর্থিক বরাদ্দ মিলল রাজ্য সেচ দপ্তরের তরফে। শহরের একদম মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া ওই খাঁড়ি সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের। এহেন খাঁড়িকে কেন্দ্র করেই পর্যটনের স্বপ্ন দেখছে বালুরঘাটবাসী। বছর কয়েক আগে প্রায় মজে যাওয়া খাঁড়িটির সংস্কারে হাত দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। ৫০ শতাংশ কাজ করার পরই খাঁড়ি সংস্কারের ওই কাজ কোনও কারণে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই উদ্যোগে সারাবছর জল ধরে রাখা সম্ভব হয়েছিল ওই খাঁড়িতে। তাকে ঘিরেই সৌন্দর্যায়ন ও অন্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হল বালুরঘাট পুরসভা।
বাসিন্দাদের মতে, আত্রেয়ী খাঁড়ি বালুরঘাটের সম্পদ। ভৌগোলিক অবস্থা এতটাই সুন্দর যে ওই খাঁড়িকে কেন্দ্র করে নতুন জলপথ তৈরি হতে পারে বালুরঘাটে। শহরের মেলবন্ধন হতে পারে। অবশেষে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাৎসরিক বরাদ্দ মেলায় খুশি পুর কর্তৃপক্ষ।
একসময় জেলা প্রশাসনের ভাবনা ছিল, গ্রাম-শহরের যোগাযোগকারী ওই খাঁড়িতে বোটিং, বসবার জায়গা, কফি হাউস নির্মাণ সহ নানা বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। সাজিয়ে তোলা হবে খাঁড়ির দুই পাড়। সেই স্বপ্ন সত্যি করতেই এগোচ্ছে পুরসভা। রাজ্যের সেচ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে সরাসরি দেখা করে এ বিষয়ে আর্থিক বরাদ্দের দাবি করেছিলেন বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র। আর মন্ত্রীর পরামর্শেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সেচ দপ্তরের মাধ্যমে খাঁড়িগুলি সংস্কারের জন্য আর্থিক অনুদান পেতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সেচ দপ্তরের তরফে রাজ্যের কাছে অনুদান চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। আর তার ভিত্তিতে বালুরঘাট পুরসভার অধীনে থাকা খাঁড়িগুলি সংস্কারের জন্য বাৎসরিক ১৮ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়ার কাজ শুরু করল রাজ্য সেচ দপ্তর।
বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র বলেন, ‘শহরের মধ্যে থাকা খিদিরপুর শ্মশান খাঁড়ি, রামকৃষ্ণপল্লি খাঁড়ি ও চকভৃগুর ডাকরা খাঁড়ি বছরভর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজস্ব দপ্তরের পক্ষ থেকে মোট ১৮ লক্ষ টাকা করে প্রতি বছর দেওয়া হবে। ওই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সরাসরি করবে জেলা সেচ দপ্তর। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলেই আমরা ডাঙা খাঁড়িকে সাজিয়ে তুলতে পরবর্তী যাবতীয় পরিকল্পনা করতে পারব।’