পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: ‘এই বয়সেও পুজোয় এত আনন্দ করতে পারব ভাবিনি।’ মিষ্টি হেসে এমন কথা জানান ময়ামারি এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা বাদলি সরকার। তাঁর পাশেই বসেছিলেন কুয়ারণ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা নিশিপদ রায়। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর পুজো আসে, আবার চলেও যায়। আমরা শুধু দূর থেকে ঢাকের আওয়াজ শুনি। বহুবছর পর এবছর ফের ছোটদের হাত ধরে মণ্ডপে গিয়ে মায়ের দর্শন করলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক জায়গা থেকে নতুন জামাকাপড় দেওয়া হলেও ঠাকুর দেখতে যাওয়া হয় না।’ মহাষষ্ঠীর দুপুরে বালুরঘাটের (Balurghat) একদল তরুণ-তরুণীর হাত ধরে শহরের বেশ কিছু পুজোমণ্ডপ ঘুরে দেখলেন প্রত্যন্ত গ্রামের দুঃস্থ প্রবীণরা।
বড় বড় মণ্ডপ ও আলোর ঝলকানিতে যখন শহরবাসী উৎসবে মাতোয়ারা তখন শহর লাগোয়া কিছু গ্রামের প্রবীণদের বাড়িতে নিস্তব্ধতা। তাঁদের পুজোর আনন্দ বলে বিশেষ কিছু নেই। আর্থিক সচ্ছলতার অভাব এই আনন্দ থেকে তাঁদের বঞ্চিত করেছে। কিন্তু এই মন খারাপ ভুলে তাঁরাও যাতে পুজোর আনন্দে মেতে উঠতে পারেন তাই তাঁদের এক মণ্ডপ থেকে আরেক মণ্ডপ ঘুরিয়ে দেখানোর দায়িত্ব নিয়েছে ওই তরুণের দল। এই তরুণদের মধ্যে কেউ কলেজ পড়ুয়া আবার কেউ সদ্য কলেজের গণ্ডি পার করেছে। তাঁরা ঠিক করেছিলেন বালুরঘাট ও পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চল থেকে আর্থিকভাবে দুর্বল প্রবীণদের শহরের প্রতিমা দর্শন করাবেন। তাঁদের এই পরিকল্পনায় এক এক করে ৯৪ জন তরুণ ও তরুণী যোগ দিয়েছেন। তাঁরা সকলে মিলে দলের নাম দিয়েছেন ‘ছোট্ট প্রচেষ্টা’। বালুরঘাটের পাশে আশইর, কুয়ারণ, ডাকরা, ময়ামারি সহ একাধিক এলাকার প্রবীণদের দেখা মিলেছে এই প্রতিমা দর্শনের অভিনব উদ্যোগে।
মূলত টিউশন পড়িয়ে সেখান থেকে পাওয়া টাকা বাঁচিয়ে এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের এই উদ্যোগে তাঁদের মা-বাবারাও কিছুটা আর্থিক সাহায্য করেছেন।
এছাড়া রবিবার দুপুরে বালুরঘাট নাট্যতীর্থে প্রবীণদের দর্শক আসনে বসিয়ে তাঁদের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন উদ্যোক্তারা। যেখানে নাচ-গান ও আবৃত্তি হয়। উপস্থিত ছিলেন বঙ্গরত্ন সমাজসেবী তাপস চক্রবর্তী, ভারত সেবাশ্রম সংঘের মহারাজ বিষ্ণুরুপানন্দজি, ডিএসপি (সদর) বিক্রম প্রসাদ, প্রদীপ সাহা প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানের পর ১৫০ জন প্রবীণকে নিয়ে টোটোয় চেপে শুরু হয় পুজো পরিক্রমা। দুপুরের বালুরঘাট পুরসভা সংলগ্ন ক্ষণিকা ভবনে সকলের জন্য আহারের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। সবশেষে তাঁদের উপহার হিসেবে নতুন জামাকাপড় দেওয়া হয়।
উদ্যোক্তাদের তরফে সৌম্যদীপ কুণ্ডু বলেন, ‘আর্থিকভাবে দুর্বল ও প্রায় অবহেলিত প্রবীণদের শারদোৎসবের আনন্দে শামিল করার উদ্দেশ্যে আমাদের এই আয়োজন।’
প্রবীণরা জানান, এখন আর তাঁদের সেভাবে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা হয় না। পুজোর দিনগুলিতে সবাই দেখি ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছে। বহুদিন পর তাঁরা এভাবে এক মণ্ডপ থেকে আরেক মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখলেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এমন উদ্যোগে তাঁরা সবাই খুব খুশি হয়েছেন।