পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: রাস্তা দিয়ে আপন মনে যেতে যেতেই পথচলতি মানুষের চোখ আটকে গেল ছবির ফ্রেমে। কোথাও বন ও বন্যপ্রাণী তো কোথাও লৌকিক উৎসব, গ্রামবাংলার ছবি ধরা পড়ল থানা মোড়ে। এভাবেই খোলা আকাশের নীচেই রাস্তার পাশে ছবির উৎসব শুরু হল বালুরঘাটে (Balurghat)। দক্ষিণ দিনাজপুর ফিল্ম অ্যান্ড ফোটোগ্রাফি ক্লাবের নবম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার থেকে শুরু হওয়া স্ট্রিট গ্যালারি আগামী বুধবার পর্যন্ত বালুরঘাটের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে চলবে।
ছবি যেন কথা বলছে। খেটে খাওয়া মানুষের কথা, সাধারণ মুহূর্তও ক্যামেরার লেন্সে অসাধারণ হয়ে ওঠার কথা। যা দেখতে এদিন বালুরঘাট শহরে থানা মোড় চত্বরে ভিড় জমালেন আট থেকে আশি। বালুরঘাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনেই রাস্তার উপর সারি সারি দাঁড় করানো বিভিন্ন আঙ্গিকের ছবি। যেখানে জেলার ঐতিহ্য থেকে শুরু করে সমাজ ব্যবস্থা সবকিছুই যেন ফুটে উঠল এদিন। উদ্যোক্তা সংস্থার তরফে এই স্ট্রিট গ্যালারি ছবির উৎসব তৃতীয় বর্ষে পড়ল এবার। সম্প্রতি সংস্থার তরফে আলোকচিত্রশিল্পীদের নিয়ে এক মাস ধরে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে জেলার ৩০ জন তরুণ শিল্পী তাঁদের তোলা সেরা ছবি নিয়ে অংশ নিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাছাই করে ছয়টি বিভাগে মোট ২৬ জন প্রতিযোগীর ৩৬টি ছবি স্ট্রিট গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে।
জেলার শিল্পীদের প্রকৃতি ও ওয়াইল্ড লাইফ, স্ট্রিট ফেস্টিভাল এবং ওপেন ক্যাটিগোরি অনুযায়ী বিভিন্ন ছবিতে একদিকে যেমন উঠে এসেছে জেলার ঐতিহ্য ও বিভিন্ন উৎসবের মুহূর্ত। ঠিক তেমনি বিভিন্ন জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিভিন্ন ছবিতে প্রকাশ পেয়েছে। প্রদর্শনীর শেষ দিনেও বিজয়ী আলোকচিত্রশিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন জেলার বিশিষ্টজনরা।
এদিন সন্ধ্যায় থানা মোড় দিয়ে কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ত্রিধারা এলাকার শান্তনু সরকার। থমকে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এভাবে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে উন্নত মানের ছবি দেখার সুযোগ মিলবে ভাবতে পারিনি। জেলার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য সহ প্রকৃতির একাধিক ছবি দেখে মুগ্ধতার রেশ সহজে কাটার নয়।’
বালুরঘাটের আলোকচিত্রশিল্পী অন্তরা ঘোষের কথায়, ‘বদ্ধ ঘরে ছবির উৎসব না করে এভাবে খোলা আকাশের নীচে করার জন্য প্রচুর মানুষ আমাদের কাজ দেখতে পেলেন। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছুই নেই।’ আরেক শিল্পী বিনীতা চৌধুরীর মতে, ‘স্ট্রিট গ্যালারির ভাবনা ছবি প্রদর্শনীর ধারণাকে পালটে দিয়েছে। রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়ার মধ্যেই দর্শক ছবির ফ্রেমে চোখ রাখছেন। অন্যরকম ভালো লাগা ছুঁয়ে গেল এদিন।’
ত্রিমোহিনীর শিল্পী মৌর্য সরকার বলেন, ‘দর্শকদের মনে দাগ কাটলেই পরিশ্রম সার্থক।’ উদ্যোক্তা সংস্থার কর্ণধার ঋত্বিক সাহা বলেন, ‘আলোকচিত্র নিয়ে প্রতিযোগিতা ও তারপর খোলা আকাশের নীচে কার্যত রাস্তার ওপরেই ছবি প্রদর্শনী চলছে। এরপরে গঙ্গারামপুর বাসস্ট্যান্ডে এমনই প্রদর্শনী হবে।’