পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: অভাবী কৃতীর পাশে দাঁড়ানোটা যেন রাজনৈতিক লড়াই! সামনের বছর বিধানসভা ভোট। তার আগে শাসক-বিরোধী দুই পক্ষই কৃতীর পাশে দাঁড়িয়ে ফায়দা তুলতে চাইছে। রবিবার আইআইটি জ্যাম পরীক্ষায় ১২৬ র্যাংক করা নীলাঞ্জন মণ্ডলের বাড়িতে গেরুয়া-সবুজ শিবির দুই পক্ষকেই দেখা গেল। একদিকে ছিলেন বালুরঘাটের (Balurghat) সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার, অন্যদিকে বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অরূপ সরকার। বিজেপির কথায়, তারা আগে নীলাঞ্জনের পাশে দাঁড়াবে বলে ঠিক করেছিল। তাদের দেখাদেখি তৃণমূলের নেতারা সেখানে যান। তৃণমূলের তরফে অবশ্য উলটো দাবি করা হয়েছে। এতদিন তারা কোথায় ছিল, সেই প্রশ্নও উঠছে।
বালুরঘাটের ডাঙ্গা গ্রামের টিনের চালাঘরে বইখাতা গুছিয়ে স্বপ্ন বুনেছিলেন নীলাঞ্জন। লক্ষ্য স্থির রেখে চলা এই মেধাবী ছাত্র জয়েন্ট অ্যাডমিশন ফর মাস্টার্স পরীক্ষায় দেশের মধ্যে ১২৬ নম্বর স্থান অধিকার করেছেন। সেই পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন। উত্তরাখণ্ডের আইআইটি রুরকিতে পড়ার সুযোগ হয়েছে তাঁর। কিন্তু বাদ সেধেছে অভাব।
নীলাঞ্জনের বাবা যোগেশ মণ্ডল পেশায় ভাগচাষি, মা জয়ন্তী বর্মন গৃহবধূ। সংসার চলে সামান্য জমি আর দিনমজুরির টাকায়। ছেলের পড়াশোনার খরচ মেটাতে ইতিমধ্যে বহু সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা। এখন ভর্তি হতে প্রয়োজন প্রায় ৫৬ হাজার টাকা। যা জমা দিতে হবে আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে। রয়েছে পড়া চলাকালীন একাধিক খরচ। বিষয়টি জানতে পেরেই কোমর কষে মাঠে নেমেছে দুই রাজনৈতিক দল। কে তাঁর পাশে দাঁড়াবে, এই নিয়ে যেন সম্মুখসমরে তৃণমূল-বিজেপি। রবিবার বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র বলেন, ‘এদিন মেধাবী নীলাঞ্জনের বাড়ি গিয়ে সংবর্ধনা জানিয়েছি। পাশাপাশি তার কলেজে ভর্তি সহ বিভিন্ন বিষয় আমরা দেখছি। মুখ্যমন্ত্রীকেও তার কথা জানিয়ে পড়াশোনার বিষয়ে পাশে দাঁড়ানো হবে।’ অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের গলাতেও একই আশ্বাসের সুর। তিনি বললেন, ‘আইআইটি রুরকির সঙ্গে কথা বলেছি। ৯০ শতাংশ কাজ হয়েছে। সোমবার চূড়ান্ত খবর জানা যাবে। প্রাক্তনী সমিতির তরফে তার ভর্তির বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’
এর মধ্যে নিজের চিন্তা কিছুটা কমেছে বলে জানালেন নীলাঞ্জন। তাঁর কথায়, ‘এই সুযোগটা আমার ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবা-মায়ের কষ্ট লাঘব করতে চাই। অন্তত কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা হয়ে যাবে জেনে এখন অনেকটা হালকা লাগছে।’
মেধাবী ওই পড়ুয়ার স্বপ্ন পূরণ হোক, সেটাই চাইছেন সকলে।