পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: রাবার ড্যাম, চেক ড্যাম, ব্যাপক পরিমাণে জল তুলে নেওয়া, অবাধে বালি উত্তোলন সহ একাধিক কারণে আত্রেয়ী নদীর এই পরিস্থিতি। নদীর গভীরতা পর্যবেক্ষণ করতে বালুরঘাটে (Balurghat) এসে এমনই বিশ্লেষণ ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সহ নদী গবেষক প্রতিনিধিদলের। বাংলাদেশের রাবার ড্যাম, বালুরঘাটের চকভবানী এলাকার চেক ড্যামের ফলে আত্রেয়ীর কী অবস্থা দাঁড়িয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। পাশাপাশি নদীর জল কমে আসার পেছনে একাধিক বিষয় পর্যালোচনা করছেন।
বালুরঘাটের লাইফলাইন আত্রেয়ী। বাংলাদেশ থেকে প্রবাহিত হয়ে বালুরঘাটের মধ্যে গিয়ে আবার বাংলাদেশে পড়েছে। ওপার বাংলার মোহনপুরে রাবার ড্যাম দেওয়ায় বালুরঘাটে নদীর জল শুকিয়ে আসছিল। তাই পর্যাপ্ত জল পেতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্বল্প উচ্চতার বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। তার ফলে বালুরঘাটের উত্তর প্রান্তে জল থাকলেও দক্ষিণ প্রান্তে নদীর প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের তত্ত্বাবধানে এসে ‘নদীর পথে হাঁটি’ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। যেখানে সহযোগিতা করেছে দিশারী সংকল্প সংস্থা। ওই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ম্যানচেস্টারের অধ্যাপক ডঃ মেহবুব শাহানা, নদী বিজ্ঞানী ডঃ স্নেহাল দণ্ডে ও পরিবেশপ্রেমী তুহিনশুভ্র মণ্ডল। গবেষণা সহযোগী হিসেবে ছিলেন শেখ আজিম আলি প্রমুখ। তাঁদের এই কর্মসূচি চলতি মাসেই শুরু হয়েছিল কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপরে সুন্দরবন এলাকার চরঘেরিতে, কৃষ্ণনগরের জলঙ্গি নদী, ধুলিয়ানের গঙ্গা ও এদিন আত্রেয়ী নদীতে এই পর্যবেক্ষণ চলেছে। এদিন গবেষক দল চকভবানী চেক ড্যাম, ডাঙি এলাকা, পাগলিগঞ্জ ও পতিরাম এলাকা পরিদর্শন করেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং তিস্তা নদীর চরে কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। এদিন তারা আত্রেয়ীর বর্তমান দুরবস্থা দেখে রাবার ড্যাম, চেক ড্যাম, বিশ্ব উষ্ণায়ন, ব্যাপক পরিমাণে জল তুলে নেওয়া, অবাধে বালি উত্তোলন সহ একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছেন।
অধ্যাপক ডঃ মেহেবুব শাহানা জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলির মধ্যে আত্রেয়ী অন্যতম। এখানকার মৎস্যজীবী, কৃষিজীবী, গবেষক, সাহিত্যিক ও পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার গোড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি। সমাধানের প্রয়োজনেই এই গবেষণা। নদীর জল কেন শুকিয়ে যাচ্ছে তা বোঝার পাশাপাশি স্থানীয়দের জীবনযাত্রায় এর প্রভাব সহ পরিবেশের ভারসাম্য কতটা বিঘ্নিত হচ্ছে তা পর্যালোচনা করছি।’
বালুরঘাটের পরিবেশপ্রেমী তুহিনশুভ্র মণ্ডল বলেন, ‘এই গবেষণার ফলাফল আমরা সরকার সহ সংশ্লিষ্ট জায়গায় তুলে ধরব। নদীকে নিজের মতো চলতে দেওয়া তথা তার আগের অবস্থা ফেরানোই আমাদের লক্ষ্য।’ পরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ডাঙি এলাকায় গিয়েও নদী পরিদর্শন করেছেন বিশেষজ্ঞদের দল।