Balurghat । মূক-বধির, বাবা-মা হারা এক কিশোরীর অদম্য লড়াই! মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পূজার জীবনসংগ্রাম জাগায় প্রেরণা

Balurghat । মূক-বধির, বাবা-মা হারা এক কিশোরীর অদম্য লড়াই! মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পূজার জীবনসংগ্রাম জাগায় প্রেরণা

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


বালুরঘাট: জন্ম থেকেই মূক ও বধির পূজা। মূলত ইশারাতেই কথা বলতে হয় তাঁর সঙ্গে। কিন্তু সেই মেয়ে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিচ্ছে এবছর। বালুরঘাট খাদিমপুর গার্লস হাইস্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পূজা সিং। মাত্র এক বছর বয়সে তাঁর বাবা গায়ে আগুন লেগে মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার কয়েক বছর পর থেকেই মায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পূজার। ছোটবেলাতেই আবার হৃদপিণ্ডে ছিদ্র ধরা পড়ে। দুর্গাপুর থেকে তার অস্ত্রোপ্চারও হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জনে তাঁর জীবনের এই লড়াই দেখে অবাক প্রতিবেশী থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষিকারা।

মূক ও বধির পূজার বয়স মাত্র ১৬ বছর। কিন্তু জীবনের মূল মন্ত্র সে এই বয়সেই বুঝে গিয়েছে। কোনও অজুহাত নয়, পড়াশোনা করতেই হবে। তাঁর অক্ষমতাকে হেলায় উড়িয়ে সে এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। পূজার বাড়ি বালুরঘাটের খাদিমপুর বৈদ্যনাথ পাড়ায়। ইতিমধ্যেই বালুরঘাট গার্লস হাই স্কুলে বাংলা ও ইংরেজি পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে তাঁর।

এদিন সে ইশারাতেই জানিয়ে দিল যে, তাঁর পরীক্ষা ভালো হয়েছে। তার বাবা অরুণ সিং প্রায় ১৫ বছর আগে গায়ে আগুন লেগে মারা গিয়েছেন। তিনি আগে রিকশা চালাতেন। তখনও অভাবের সংসার ছিল। তবু কোনও মতে দিন কাটছিল। বাবা মারা যাওয়ার পরে মায়ের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন হয়। মায়ের সঙ্গে প্রায় দশ বছর আগে থেকে কোনও যোগাযোগ নেই। সেই ছোটবেলা থেকে দিদার কাছেই মানুষ পূজা। দিদার বাড়িতে থেকেই তাঁর পড়াশোনা। বাবার বাড়ি চৌরঙ্গী এলাকার ঘোষ পাড়ায় হলেও সেখানে তাঁর যাওয়া হয় না। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও প্রাইভেট টিউশন নেওয়ার সামর্থ্য নেই, যা পড়া তাঁর বাড়িতেই। তাঁর অভিভাবকেরা জানান, মাঝেমধ্যেই গভীর ভাবনায় হারিয়ে যায় সে। সামনে বই খোলা রেখে মাঝেমধ্যেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। তখন তার মাথায় কী ভাবনা-চিন্তা চলছে তা কেউ জানে না। সেটা ভাষায় প্রকাশ করতেও অক্ষম সে। প্রতিবেশীদের মতে, ‘অনেক সুস্থ মানুষও মাধ্যমিক দেওয়ার পর্যায়ে পৌঁছতে পারে না। সেই জায়গায় পূজা অদম্য ইচ্ছাশক্তির জ্বলন্ত উদাহরণ।’

পূজার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল ঘরের প্রতিটি কোন থেকে যেন অভাবের চিহ্ন ফুটে উঠছে। দিদা গৃহ পরিচারিকার কাজ করেন। যা উপার্জন হয় তা দিয়ে খাতা, কলম কিনতেও হিমশিম খেতে হয়। হৃদপিন্ডের ফুটো ধরা পড়ায় সেখানেও ব্যাপক অর্থ ব্যয় হয়েছে।এরপর মাঝেমধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যেত পূজা। এমনকি গত বছর নভেম্বর মাসেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল সে। স্কুলের তরফে তার শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে আগামী বছর পরীক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এখনও সে পুরোপুরি সুস্থ নয়। কিন্তু জেদের বশেই এবছর পরীক্ষায় বসেছে। তার দিব্যাঙ্গ শংসাপত্রে দেখা গেল ১০০% স্থায়ী প্রতিবন্ধকতার শিকার সে। কিন্তু সেগুলির পরোয়া করে না পূজা। প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও সরকারি তেমন সুযোগ-সুবিধা পায় না বলে আক্ষেপ পরিবারের।

পূজার দিদা অঞ্জলি সিং বলেন, ‘পড়ার কথা তাঁকে বলতে হয় না। এমনি বই নিয়ে বসে যায়। পাড়ার সকলের সে খুব প্রিয়। আমি চলে গেলে তার কি হবে এই ভাবনায় এখন কুরে কুরে খায় আমাকে।’

পূজার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সুলভা মন্ডল জানান, ‘শরীর ভাল থাকলে কখনও স্কুল কামাই করে না সে। শিক্ষিকারা যতটুকু পেরেছে তাঁকে পড়িয়েছে। তাঁকে আলাদা করেও পড়া দেখানো হত। স্কুলের তরফে তাঁকে অনেক বই বিনামূল্যে দেওয়া হয়। স্কুলের বেতনও তাঁর জন্য মুকুব। ওর ইচ্ছা শক্তি প্রবল। তাঁর পরীক্ষা দেওয়ার জেদ সুস্থ কোনও পড়ুয়াকেও হার মানাবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *