বক্সিরহাট: ‘তুফানগঞ্জে বিজেপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে ঢুকতে দেওয়া হবে না’ সোমবার প্রকাশ্যে এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতী রাভা। এতদিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রসঙ্গে শাসকদলের নেতাদের মুখে বিরোধীদের উদ্দেশে জোরালো কটাক্ষ শোনা গিয়েছে। প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে তৃণমূলের নেতারা বিতর্ক তৈরি করেছেন এমন উদাহরণও কম নেই। এবার সেই ভাষাই শোনা গেল বিজেপির মুখে। সোমবার নিজেদের দখলে থাকা তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে ঢুকতে না দেওয়ার কথা বলে হুংকার দিয়েছেন মালতী। সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই কোচবিহারের রাজনীতিতে তর্জা শুরু হল। বিধায়কের হুঁশিয়ারির পালটা দিতে রাজ্যের শাসকদল অবশ্য জানাল, সময় কথা বলবে।
বিজেপিকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো, বক্সিরহাটে তাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা, বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও বাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার বক্সিরহাটে একটি বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। অভিযোগ, বিজেপির সেই মিছিলকে বানচাল করতে সকাল থেকেই বক্সিরহাটে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা জমায়েত শুরু করে। একসময় দু’পক্ষ কার্যত মুখোমুখি চলে আসে। তবে বড়সড়ো উত্তেজনা ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কা করে সকাল থেকেই বিরাট পুলিশবাহিনী এলাকায় মোতায়েন ছিল। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে পুলিশর মাঠে নেমে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুলিশি হস্তক্ষেপে পিছু হটতে বাধ্য হয় তৃণমূল। আর এপরেই বিজেপির মিছিলে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করার অভিযোগ তুলে শাসকদলকে পঞ্চায়েতে ঢুকতে না দেওয়ার কথা সাফ জানান মালতী।
তাঁর কথায়, ‘আমরা তো কোনওদিন তৃণমূলের মিছিলে বাধা দিইনি। তবে এবার তৃণমূল যে অশান্তির পথ দেখিয়েছে, আমরা এখন থেকে সেই পথই অবলম্বন করব। আমাদের যে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত আছে সেখানে তৃণমূলকে ঢুকতে দেব না। দেখি তৃণমূলের নেতারা কী করে। এদিন আমাদের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিল। আমরা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতাম। উলটোদিকে ছিল গুটিকয়েক তৃণমূল কর্মী। কিন্তু আমরা আইন হাতে তুলে নিইনি। শেষে তৃণমূল পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।’ এপ্রসঙ্গে তৃণমূলের ব্লক সহ সভাপতি নিরঞ্জন সরকার পালটা বলেন, ‘আমাদের প্রশাসন দুপুর একটা পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। আমরা সেই সময়ের মধ্যে মিছিল শেষ করেছি। তারপর বিজেপি তাদের সময়মতো মিছিল করেছে। আমরা কাউকে বাধা দিইনি। আমরা বাধা দিলে বিজেপির কেউ এলাকায় ঢুকতে পারত না।’ বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে ঢুকতে বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গে নিরঞ্জন জানালেন, সময় কথা বলবে।
বক্সিরহাটে বিজেপির কার্যালয়ে তৃণমূলের হামলা ও দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মামলায় ফাঁসানোর প্রতিবাদে সোমবার বিজেপির সাংসদ মনোজ টিগ্গা, জেলা সভাপতি অভিজিৎ বর্মন, বিধায়ক মালতী রাভার উপস্থিতিতে থেটারপার থেকে বক্সিরহাট দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। এদিকে, থেটারপারে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা সকাল থেকেই জমায়েত শুরু করে। বিজেপির বিরুদ্ধে স্লোগান চলতে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ে বিজেপির মিছিল শুরু হলে দু’পক্ষ মুখোমুখি চলে আসার উপক্রম হয়। এনিয়ে বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘বক্সিরহাটে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। থানায় অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এরই প্রতিবাদে এদিন আমাদের বিক্ষোভ মিছিল ছিল। মিছিলের অনুমতি থাকার পরেও তৃণমূল ভয় দেখিয়ে বিজেপিকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।’