এম আনওয়ারউল হক, বৈষ্ণবনগর: বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে ঘিরে চাঞ্চল্যকর হত্যার অভিযোগ উঠল মালদার বৈষ্ণবনগরে। অভিযোগ, মাংসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খুন করা হয়েছে একই পরিবারের তিন সদস্যকে। কালিয়াচক ৩ ব্লকের কৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পার চকবাহাদুরপুর গ্রামে একই পরিবারের তিন সদস্যের রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃতরা হলেন পুষ্প মণ্ডল (৬৫), তাঁর পুত্রবধূ বুল্টি মণ্ডল (৩৫) ও নাতনি পিউ মণ্ডল (১০)।
বুধবার রাতে পরিবারের নয়জন ভাত ও খাসির মাংস খেয়ে শুতে যান। অভিযোগ, সেই মাংসের সঙ্গেই বিষ মিশিয়ে খাওয়ানো হয় তাঁদের। এরপর সকালে বুল্টি, তাঁর মেয়ে ও শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে বুল্টিকে নিয়ে যাওয়া হয় বৈষ্ণবনগরের বেদরাবাদ গ্রামীণ হাসপাতালে। পরে বুল্টিকে স্থানীয় এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। বাড়ি থেকে সরাসরি পিউ ও পুষ্পকে বেসরকারি হাসপাতাল হয়ে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতেই তাঁরা মারা যান।
পরিবারের ধারণা, খাবার বা টিউবওয়েলের জলের বিষক্রিয়ায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতার স্বামী স্বপন মণ্ডল বলেন, সকালে তিনজনের শরীরে চুলকানি দেখা দেয়। এরপর অসুস্থতা বাড়তে থাকে। তবে স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি, জলের সমস্যা হলে সাধারণত ডায়ারিয়ার মতো উপসর্গ হয়। এত দ্রুত মৃত্যু হয় না।
পুলিশ ইতিমধ্যেই খাবার ও টিউবওয়েলের জলের নমুনা সংগ্রহ করেছে। মৃত তিনজনের দেহকে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বুল্টির স্বামী স্বপন মণ্ডলের দুটি বিয়ে। আগের স্ত্রীর সন্তান না হওয়ায় বুল্টিকে বিয়ে করেন স্বপন। বুল্টির দিদি রিঙ্কু স্বপনের প্রথম স্ত্রী। বিয়ের পর থেকে দুই স্ত্রীকে নিয়েই সংসার করতেন স্বপন। কিন্তু পরবর্তীতে এ নিয়ে বুল্টির সঙ্গে গণ্ডগোল শুরু হয়। বুল্টি চাইতেন, দিদি যেন ওই বাড়িতে না থাকেন। কিন্তু তাতে রাজি হননি স্বপন। এ নিয়ে বুল্টির সঙ্গে তাঁর দিদির একাধিকবার কথা কাটাকাটিও হয়।
এদিন সকালে জল খেয়ে একই পরিবারের তিনজনের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে তা মানতে নারাজ স্থানীয়রা। কারণ, ওই পরিবারে আরও অনেকে আছেন। তাদের কোনও সমস্যা না হলেও তিনজনের মৃত্যুর পিছনে বড় রহস্য রয়েছে বলেই ধারণা তাঁদের।
কৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক সদস্য বলেন, বিষয়টি পুলিশের খতিয়ে দেখা উচিত। পুলিশের একটি সূত্রে জানিয়েছে, স্বপনের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগও রয়েছে।
বেদরাবাদ গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ শেখ আব্দুল্লাহ জানান, ওই পরিবারের টিউবওয়েলের জল সহ আশপাশের ৪০টি বাড়ির জল পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জলে বিষক্রিয়ার প্রমাণ মেলেনি। ফলে রহস্য আরও গভীর হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে। মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘একটি পরিবারের তিনজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।’ জেলা শাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘স্বাস্থ্য দপ্তর ও প্রশাসনকে তদন্তে নামানো হয়েছে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।’