সানি সরকার ও খোকন সাহা, শিলিগুড়ি ও বাগডোগরা : বাগডোগরা বিমানবন্দরে কি সিন্ডিকেটরাজ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে? শুক্রবার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন প্রশ্ন সামনে এসেছে। স্থানীয়রা যেমন কাজ দেওয়ার পাশাপাশি নির্মাণসামগ্রী নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি তুলেছেন, তেমনই বরাত পাওয়া সংস্থা কমিশনের ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করছে বলে অভিযোগ উঠছে। ওই সংস্থার বিরুদ্ধে যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দিয়ে এদিন কয়েকটি বালির গাড়ি স্থানীয়রা আটকে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বরাত পাওয়া সংস্থা সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করলেও ‘কমিশন প্রথা’ স্পষ্ট করে দিয়েছেন খোদ বাগডোগরা বিমানবন্দরের উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান ও দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্ট। তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, ‘এখানে এজেন্সি কাজ করছে, তাদের বড়কর্তারা কমিশন সেট করে ভুটান সহ বাইরের সামগ্রী নিচ্ছেন। বাইরের লোকজন নেওয়া হয়েছে। আমি কোনও দুর্নীতি সহ্য করব না। কমিশন নেওয়া বরদাস্ত করব না।’
বাগডোগরা বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ শুরু হতেই নির্মাণসামগ্রী এবং কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরের দাবি জোরালো হচ্ছে। শুক্রবার যা প্রকাশ্যে এসেছে। এদিন অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁদের জমি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে স্থানীয় কিছু মানুষ বিমানবন্দরের ওয়ার্কসাইট গেটে জমায়েত হন। অভিযোগ, ওভারলোডের অভিযোগ তুলে বালিবোঝাই দু’তিনটি ট্রাক তাঁরা আটকে দেন। মনিবস্তি তুরিভিটার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বাইরে থেকে নির্মাণসামগ্রী নেওয়া যাবে না। যেহেতু এই এলাকায় কাজ চলছে, তাই অগ্রাধিকার দিয়ে নির্মাণসামগ্রী নিতে হবে তাঁদের কাছ থেকে। যেহেতু সম্প্রসারণের কাজের জন্য তাঁদের থেকে জমি নেওয়া হয়েছে, তাই কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্থানীয়দের হয়ে আকাশ নাগেশিয়া বলেন, ‘কথা ছিল যাঁদের জমিতে বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ হবে, তাঁদের কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও কাজ দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের গাড়ি নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের কাছে থেকে নির্মাণসামগ্রীও নেওয়া হচ্ছে না। বাইরের লোকজনের কাছ থেকে সমস্ত কিছু নেওয়া হচ্ছে। অথচ, আমরা একই দামে সরবরাহ করতে চাই।’ জানা গিয়েছে, শনিবার একই দাবিতে বিমানবন্দর এলাকায় জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন স্থানীয় ডাম্পারচালক ও বালির ব্যবসায়ীরা। গাড়ি এবং নির্মাণসামগ্রী নেওয়ার দাবি তুলবেন তাঁরাও।
অর্থাৎ বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ নিয়ে পরিস্থিতি ত্রমশই ঘোরালো হয়ে উঠছে। যদিও যে এজেন্সি বরাত পেয়েছে, তার প্রোজেক্ট ম্যানেজার এস সিং বলেন, ‘সমস্ত কিছুই ঠিকঠাক চলছে। এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ নেই।’ বিমানবন্দরের জয়েন্ট জেনারেল ম্যানেজার (প্রোজেক্ট) ভূদেব সরকারও একই দাবি করেছেন। তবে সাংসদের বক্তব্য, ‘স্থানীয় মানুষদের দক্ষতা অনুসারে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। শিলিগুড়ি সহ বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকার মানুষ কাজ পেলে এলাকায় কর্মসংস্থান হবে।’ তবে সিন্ডিকেট বা কমিশন প্রথা যে বরদাস্ত করা হবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। ২০২৭-এর মধ্যে নতুন টার্মিনাল চালুর লক্ষ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।