রাজা বন্দোপাধ্যায়,আসানসোল: আসানসোলের নবম শ্রেণির এক স্কুল পড়ুয়া নাবালককে তুলে নিয়ে গিয়ে যৌন হেনস্তার পরে ব্ল্যাকমেল করছিল এক ব্যক্তি। শেষ পর্যন্ত মানসিক চাপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় ওই নাবালক পড়ুয়া। এমনই অভিযোগে রবিবার রাতে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ ইমরান শেখ নামে ওই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার সকালে ধৃত ইমরান শেখকে তোলা হয় আসানসোল আদালতে। ঘটনার তদন্তের জন্য তাকে হেপাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল পুলিশের তরফে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক তার জামিন নাকচ করে ৫ দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেন। যদিও, এদিন আসানসোল আদালতে পেশ করার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ধৃত নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে। তার বক্তব্য, ‘আমাকে মিথ্যে ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৯ মে উদ্ধার হয়েছিল আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের নবম শ্রেণির পড়ুয়া সুদীপ মাজির গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত দেহ। কী কারণে সুদীপ এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা বুঝে উঠতে পারছিল না তাঁর পরিবার। পরে পড়ুয়ার পরিবারের সদস্যরা তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলে। এরপরে সুদীপের মোবাইল ফোন খতিয়ে দেখা হয়। তখনই বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। এই প্রসঙ্গে মৃত স্কুল পড়ুয়ার মা ও দিদি জানান, গত জানুয়ারি মাসে আসানসোলের রেলপারের কসাই মহল্লার বাসিন্দা ইমরান শেখ নামে এক যুবক সুদীপকে রাস্তা থেকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর গাড়িতে তাঁকে মাদক খাইয়ে যৌন নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ। সেই ছবি নিজের মোবাইল ফোনে তুলে রেখেছিল ইমরান।
তাঁদের আরও অভিযোগ, তারপর থেকে সেই ছবি দেখিয়ে বারবার সুদীপকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা নেওয়া শুরু করে অভিযুক্ত যুবক। সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যাট ও ফোন কল রেকর্ড থেকে মেলে এইসব কিছুর প্রমান। জানা যায়, এক পর্যায়ে সুদীপ জানিয়েছিল যে, তাঁর কাছে আর টাকা নেই। সে টাকা দিতে পারবেনা। কিন্তু ইমরান টাকা চেয়ে তাঁর ওপর চাপ দিতে থাকে। যে কারণে মানসিক চাপে পড়ে যায় সুদীপ। মৃতের পরিবারের দাবি, সেই মানসিক চাপেই গত ২৯ মে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয় সুদীপ। এই ঘটনার দিন কয়েক পরে গোটা বিষয়টি নিয়ে আসানসোল উত্তর থানায় সুদীপের পরিবার অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ সেই নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু করে তদন্ত। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা ছিল ইমরান শেখ। শেষ পর্যন্ত রবিবার রাতে পলাতক অভিযুক্ত ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। এই বিষয়ে পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘ধৃতকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সে ঠিক কি করেছিল, তা জানতে তাকে জেরা করা হবে।’