Asansol | ডিজিটাল অ্যারেস্টের পরিচিত স্ক্রিপ্ট! সর্বস্ব খুইয়ে পুলিশের দারস্থ পুরনিগমের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার    

Asansol | ডিজিটাল অ্যারেস্টের পরিচিত স্ক্রিপ্ট! সর্বস্ব খুইয়ে পুলিশের দারস্থ পুরনিগমের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার    

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়,আসানসোল: সেই পুরনো কায়দা। আর সেই পরিচিত কায়দাতেই সাইবার অপরাধীরা হাতিয়ে নিল ১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় যা এখনও পর্যন্ত বৃহত্তম অঙ্কের টাকা খোয়ানোর ঘটনা।  ঘটনায় টাকা খুইয়েছেন আসানসোল পুরনিগমের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সুকুমার দে। জানা গিয়েছে, তাঁকে ৩২ দিন ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে এই টাকা হাতিয়েছে সাইবার অপরাধীরা।

এই ঘটনা সংক্রান্ত অভিযোগ আসানসোল সাইবার ক্রাইম থানায় নথিভুক্ত হয়েছে গত ১১ জুন। অভিযোগে সুকুমার দে জানিয়েছেন, ৯ মে তাঁর মোবাইলে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি ফোন করেন। ‌ওই ব্যক্তি সুকুমার বাবুকে নিজের পরিচয় দেয় বিএসএনএল অফিসার হিসেবে। এরপর সে বলে, সুকুমার বাবুর আধার নম্বর ব্যবহার করে মুম্বাইয়ে একটি সিমকার্ড নেওয়া হয়েছে। ওই সিম কার্ড দেশবিরোধী নানান কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। এরপরই মুম্বই পুলিশের এক আধিকারিকের বেশে এক সাইবার দুষ্কৃতি সুকুমার দে’র মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ কল করে এবং বলে তার নামে জারি হওয়া সিম কার্ড পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া(পিএফআই)-র সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। অবৈধ উপায়ে আর্থিক লেনদেন, উগ্রপন্থী কার্যকলাপে ব্যবহার এমনকি পর্ন সিনেমা তৈরির সঙ্গেও ওই সিম কার্ডের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। এরপরই দুষ্কৃতিরা সুপ্রিম কোর্টের লেটারহেড, ব্যাংক স্টেটমেন্টের নকল কাগজ সুকুমার বাবুর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেয়। যেখানে সুকুমার বাবুর নামে কানাড়া ব্যাঙ্কের একটি একাউন্টে ২০ কোটি ৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৭৫০ টাকা জমা আছে বলে দেখানো হয়। এই বিশাল পরিমাণ টাকা কোথা থেকে তার একাউন্টে এল সেই বিষয়ে এরপর সুকুমারবাবুর কাছ থেকে জবাব চাওয়া হয়। এরপরই সুকুমারবাবুকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখানো ও হুমকি দেওয়া শুরু হয়। এ বিষয়ে প্রকৃত তদন্তের পর সুকুমার বাবু সহ তার পরিবারের সকলের জেল হতে পারে বলে এবং যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতে পারে বলে ভয় দেখানো শুরু হয়। যদিও তদন্তে সহযোগিতা করলে কিছুটা সুরাহা মিলবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। এইসব ঘটনায় সুকুমারবাবু এতটাই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন যে, দুষ্কৃতীদের সমস্ত কথা তিনি মেনে চলতে শুরু করেন। দুষ্কৃতীদের কথা মত সুকুমারবাবু এরপর তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যত টাকা ছিল সমস্ত কিছুই দুষ্কৃতীদের উল্লেখ্য করা নির্দিষ্ট একটি আরবিআই অ্যাকাউন্টে জমা করে দেন। এ বিষয়ে আরবিআই গাইডলাইনের একটি পুস্তিকা পর্যন্ত সুকুমার বাবুর কাছে পাঠিয়ে দেয় দুষ্কৃতিরা। তারা এও হুঁশিয়ারি দেয় যে, তদন্ত চলাকালীন কাকপক্ষীও যেন বিষয়টি টের না পায়। তদন্ত শেষ হলেই সুকুমার বাবু তার যাবতীয় অর্থ ফেরত পেয়ে যাবেন বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।

এরপর সুকুমার বাবুর প্রতিটি মুহূর্ত হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখে সাইবার অপরাধীরা। প্রতি দু ঘন্টা অন্তর সুকুমার বাবুর লোকেশন তাঁদের কাছে পাঠাতে হত। এই ভাবেই ৩২ দিন তাঁকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল ডিজিটাল অ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে। এদিকে সুকুমারবাবুর অ্যাকাউন্ট থেকে সমস্ত পয়সা শেষ হয়ে যাওয়ার পর দুষ্কৃতীরা তার কাছ থেকে আরও টাকা দাবি করলে সুকুমার বাবু তাদের বাড়ির যাবতীয় গয়না মুথুট ফাইন্যান্সে বন্ধক রাখেন। সেখান থেকে পাওয়া টাকা দুষ্কৃতীদের দেওয়া অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন তিনি। এরপর আরও ৪০ লক্ষ টাকা পাঠানোর জন্য সুকুমার বাবুর উপরে নানাভাবে ভয় দেখিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়। এবার সাইবার দুষ্কৃতীরা সুকুমার বাবুর কাছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গভর্নর সি রঙ্গরাজনের স্বাক্ষর করা একটি আদেশনামা পাঠায়। কিন্তু প্রাক্তন গভর্নরের সই করা আদেশনামা কেন তাকে দেওয়া হল এই বিষয়টি ভাবতে গিয়েই সুকুমারবাবুর সন্দেহ হয়। তখন তিনি বুঝতে পারেন এতদিন তাকে বোকা বানানো হয়েছে। এরপরই ১১ জুন আসানসোল কোর্ট মোড়ের বাসিন্দা সুকুমার দে আসানসোল সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ জানাতে ছুটে যান। তিনি যে সময় সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ জানাচ্ছিলেন সেই সময়ও দুষ্কৃতীদের ফোন তার মোবাইলে এসেছিল। এই ঘটনায় পুলিশ আধিকারিকেরা অত্যন্ত বিস্মিত হন। সুকুমার বাবুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আসানসোল সাইবার ক্রাইম বিভাগ একটি মামলা রুজু করেছে।  ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩১৬/(২), ৩১৮/(৪), ৩১৯/(২), ৩৩৬/(৩), ৩৩৮, ৩৪০(২)/৬১(২) ধারায় এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সাইবার প্রতারণার এই কেসটিকে আসানসোল সাইবার ক্রাইম থানা থেকে রাজ্য সাইবার ক্রাইম বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *