তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: আপনি কি অম্বলের সমস্যায় ভোগেন? যে কোনও জমায়েতে এ প্রশ্ন করলে হাত তুলবেন প্রায় সকলেই। অম্বলের গলা-বুক জ্বালার হাত থেকে রক্ষা পেতে উত্তরবঙ্গ ও সিকিমজুড়ে মুড়িমুড়কির মতো অ্যান্টাসিড খাওয়ার প্রবণতাও রয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অম্বল হলেই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অ্যান্টাসিড খাওয়ার এই প্রবণতা অজান্তেই বিপদ ডেকে আনছে। পাকস্থলী ও যকৃৎ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অ্যান্টাসিডের (Antacid) বিক্রি ও তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সিকিম বিশ্ববিদ্যালয়ের (Sikkim College) একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ইউরোপের ‘ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল রিসার্চ জার্নাল’-এ। সিকিম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডঃ ভাস্কর চক্রবর্তী ও অধ্যাপিকা ডঃ অস্মিতা ছেত্রী যৌথভাবে এই গবেষণা করেছেন। তাতেই উঠে এসেছে এই ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো তথ্য।
কেউ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার সেসবের ধার ধারছেন না। গুগল দেখে, বা পরিচিতের পরামর্শে অম্বল হলেই অ্যান্টাসিড খেয়ে নিচ্ছেন। তবে ঘনঘন অ্যান্টাসিড খাওয়ার ফলে গুরুতর রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। তা নিয়েই এক বছর ধরে সমীক্ষা করেছেন ভাস্কররা। সেই সমীক্ষা শেষে ভাস্কর বলছেন, ‘নিয়মিত যদি অ্যান্টাসিড খাওয়া হয় তাহলে পাকস্থলী ও যকৃৎ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে আলসার, অ্যানিমিয়া বা মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ দেখা যায়।’
এব্যাপারে সিকিম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তরফে শিলিগুড়ি, কালিম্পং ও গ্যাংটকের একাধিক রোগীকে নমুনা হিসেবে বেছে নিয়ে কেস স্টাডি করা হয়েছে। তাতেই দেখা গিয়েছে, বাজারে সুলভ এমন বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের অ্যান্টাসিড নিয়মিত খেলে প্রথম দিকে সুফলই মেলে। অ্যাসিডিটির সমস্যা কমে। সমস্যা তৈরি হয় দীর্ঘদিন ধরে খেলে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয় বলে জানান ডঃ ছেত্রী।
অ্যান্টাসিড খাওয়া নিয়ে সতর্ক করছেন ভাস্কররা। কিন্তু প্রশ্ন হল, উত্তরবঙ্গ বা সিকিমের বাসিন্দাদের ঘনঘন এভাবে অ্যান্টাসিড খাওয়ার প্রয়োজনই বা হচ্ছে কেন? নমুনা ধরে ধরে সমীক্ষার ফল থেকে জানা গিয়েছে, খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম এখানকার বাসিন্দাদের একটি বড় সমস্যা, এমনটাই জানিয়েছেন ডঃ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘প্রাতরাশের পর দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকার একটা অভ্যাস এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে। তাঁরা দুপুরের খাবার খাচ্ছেন বিকেলে। এমনকি রাতে খাওয়ার পরেই ঘুমিয়ে পড়ছেন।’ তাঁর কথায়, ‘খাবারের এই অনিয়মের জন্য হজমের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যা থেকে অম্বল হচ্ছে। দীর্ঘসময় খালিপেটে থাকার জন্য পাকস্থলী থেকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড বের হয়, তা অত্যন্ত ক্ষতিকর।’ তাহলে সমাধান? খালি পেটে দীর্ঘক্ষণ থাকা যাবে না। অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার টুকটাক খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বলছেন গবেষকরা।