আলিপুরদুয়ার: স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার অভিযোগ। আর এই অভিযোগ জেলার দু’-একটি স্কুলের বিরুদ্ধে নয়, জেলার সিংহভাগ স্কুলেই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মিড-ডে মিল রান্না করা হয়। পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা না ভেবে স্কুলগুলির এহেন গাফিলতিতে ক্ষুব্ধ অভিভাবক থেকে শিক্ষক সংগঠন। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক জয়ন্ত সাহা বলেন, ‘মিড-ডে মিল খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। তাই অনেক বেশি সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। এই বিষয়ে ব্লক এবং ডিস্ট্রিক্ট লেভেলের মনিটরিং টিমের নিয়মিত নজরদারি হলে ভালো হয়।’
মিড-ডে মিল রান্নার ক্ষেত্রে একাধিক বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। যেমন, রান্নার সময় বিশেষ পোশাক পরা, মাথা ঢেকে রাখা, প্রয়োজনে গ্লাভস ব্যবহার। এছাড়া, রান্নার জায়গা পরিষ্কার রাখা। নতুন মশলাপাতি ব্যবহারেরও নিয়ম-নির্দেশিকা রয়েছে। অভিযোগ, জেলার একাংশ স্কুলেই এই নিয়ম মানা হয় না।
অনেক সময় দেখা যায়, রান্নার জায়গার সামনেই উচ্ছিষ্ট ফেলে রাখা হয়েছে। আঢাকা খাবার বা রান্নার সময় নির্দিষ্ট পোশাকবিধি মেনে চলা হচ্ছে না। পরিদর্শনের সময় কিংবা সংবাদমাধ্যমের সামনে সেসব ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁরা চলে গেলে আবার তা খুলে ফেলা হয়। এতে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
মিড-ডে মিলের ওসি বিজয় মোক্তান জানান, জেলায় তিন হাজারেরও বেশি মিড-ডে মিল কর্মী রয়েছেন। তাঁদের বেশিরভাগকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘গত বছর এক হাজার দুশোজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট পোশাকবিধি মেনে চলারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসংঘের রাজ্য অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক অসীম দাস জানান, বেশিরভাগ স্কুলে ডাইনিং শেড নেই। ক্লাসরুমের বাইরের বারান্দায় বা মাঠে খাওয়াদাওয়া করতে হয় পড়ুয়াদের। বর্ষাকালে সমস্যাটা আরও বাড়ে।
বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে নেই নলকূপ, কিংবা ফিল্টার। ফলে রান্নায় ব্যবহৃত জলের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাছাড়া, খাওয়ার আগে একটি নলকূপে হাত ধুতে হয়। ফলে অনেকসময়ই হাত ঠিকমতো পরিষ্কার থাকে না। অ্যাপ্রনের মতো জিনিসপত্রেরও নিত্য সরবরাহের প্রয়োজন। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলে সেসব মানাই হয় না বলে তাঁর অভিযোগ।
খাওয়ার পর পড়ুয়ারা বাসন ধুয়ে রাখে। ফলে অনেকসময়ই সেগুলো ঠিক করে ধোয়া হয় না। আর কয়েকদিনের মধ্যে গরমের মরশুম শুরু হচ্ছে। তখন এইসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে পড়ুয়াদের শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা।
সম্প্রতি মিড-ডে মিল নিয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরে একাধিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন আলিপুরদুয়ার মহকুমা শাসক। কোন স্কুলে কীভাবে মিড-ডে মিল রান্না হচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখেন। আলিপুরদুয়ার মহকুমা শাসক দেবব্রত রায় বলেন, ‘শহরের কয়েকটি বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কীভাবে রান্না হচ্ছে, তা দেখা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথাও বলা হয়েছে। শিক্ষা দপ্তর সাধারণত বিষয়টি দেখে থাকে।’