প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার : স্বামী তুমি কার? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে রাতের শহরে রাজপথে রীতিমতো হাত ধরে টানাটানি। সোমবার রাতে এমন ঘটনাই ঘটেছে আলিপুরদুয়ার শহরের চৌপথি সংলগ্ন এলাকায়। পথচলতি অনেকেই দেখেছেন এক পুরুষের হাত ধরে টানাটানি করছেন এক মহিলা। তবে ওই দেখাটুকুই। বিবাদের সমাধানে কেউ এগিয়ে আসেননি। শেষে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। তবে এব্যাপারে আলিপুরদুয়ার থানার আইসি অনির্বাণ ভট্টাচার্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
বিবাদটা কী নিয়ে? অভিযোগ, প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও সন্তানকে রেখেই দ্বিতীয় বিয়ে করে দিব্যি সংসার করছিলেন এক তরুণ। তবে ‘ধরা’ পড়ে গেলেন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে। স্বামী ফেসবুকে অন্য এক মহিলার সঙ্গে ছবি পোস্ট করতেই প্রথম স্ত্রীর সন্দেহ হয়। স্ত্রী, সন্তান থাকা সত্ত্বেও অন্য স্ত্রীর সঙ্গে ছবি কেন? এই প্রশ্ন করতেই অশান্তির সূত্রপাত। তারপরেই মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ করে দিয়েছিলেন স্বামী। তবে ওই বধূও হাল ছাড়েননি। খুঁজতে খুঁজতে চলে এসেছেন আলিপুরদুয়ারে। সোমবার রাতে হাতেনাতে ধরে ফেলেছেন সেই তরুণকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত তরুণের বাড়ি কোচবিহার এলাকায়। আর প্রথম স্ত্রীর বাপের বাড়ি পররপারে। প্রেম করে বিয়ে। তারপরেই দুজন শিলিগুড়ি এলাকায় থাকতে শুরু করেন। সন্তান গর্ভে আসতেই সমস্যার সূত্রপাত বলে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর অভিযোগ। স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। সেই মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন। তারপর থেকে স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে সেই তরুণের যোগাযোগ নেই বললেই চলে।
নানা সূত্রে খবর পেয়ে সোমবার চার মাসের সন্তানকে নিয়ে আলিপুরদুয়ার শহরে স্বামীর খোঁজে আসেন প্রথম স্ত্রী। শহরের একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন সেই স্বামী। দুপুরে সেই দোকানে পৌঁছে যান সেই বধূ। দ্বিতীয় স্ত্রী সহ স্বামীর ছবি দেখালে দোকানের লোকজন চিনতে পারেন। সেখান থেকেই তরুণের ভাড়া বাড়ির খোঁজ পান স্ত্রী।
তারপর অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেন। তবে তা সফল হয়নি। শেষপর্যন্ত সটান স্বামীর নতুন সংসারে গিয়ে হাজির হন। আলিপুরদুয়ার চৌপথি সংলগ্ন একটি ভাড়াবাড়িতে প্রায় তিন মাস ধরে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে থাকছিলেন ওই তরুণ। চৌপথি এলাকার ভাড়াবাড়িতে মা ও কোলের সন্তানকে নিয়ে হাজির হন প্রথম স্ত্রী। দুই পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। বিবাদ থেকে ধস্তাধস্তি। স্বামী যাতে পালাতে না পারে তার জন্য তার পোশাক ধরে রেখেছিলেন প্রথম স্ত্রী। এই দৃশ্য প্রত্যক্ষদর্শীদের হাসির খোরাক হয়ে ওঠে। স্বামী-স্ত্রীর টানাহ্যাঁচড়াতে তাদের চার মাসের সন্তান আহত হয়েছে বলে দাবি সেই বধূর। পুলিশ সোমবার রাতেই অভিযুক্ত তরুণকে আটক করে এবং প্রথম স্ত্রী ও শিশুটিকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।
দ্বিতীয় স্ত্রী আলিপুরদুয়ার শহরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে কর্মরত। তবে মঙ্গলবার তিনি কাজে যাননি। আর গোটা ঘটনা নিয়ে অভিযুক্ত তরুণ ও দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী কোনও মন্তব্য করেননি।