আলিপুরদুয়ার: প্রায় এক মাস গরমের ছুটির পর স্কুল খুলল সোমবার। যদিও আলিপুরদুয়ার জেলায় গরমের ছুটিটা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই কেটে গিয়েছে। তবে স্কুল খোলার পর প্রথম দিন কিন্তু হাতেগোনা পড়ুয়া নিয়ে ক্লাস করল স্কুলগুলি। সোমবার বেশিরভাগ স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ। প্রাথমিক ও হাইস্কুলগুলিতে একই চিত্র ধরা পড়েছে।
রবিবারই ছিল জামাইষষ্ঠী। শিক্ষকরা মনে করছেন, অনেকেই হয়তো সেই পার্বণ উপলক্ষ্যে মামার বাড়ি গিয়েছে। এদিন আর ফিরে স্কুলে যোগ দিতে পারেনি। আবার পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ এখন বাইরে ঘুরতে যাওয়ার ফলেও উপস্থিতির এই দশা বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। আবার বিভিন্ন স্কুলে এখন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তার ফলেও কোথাও কোথাও পড়ুয়ার সংখ্যা কম হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গরমের ছুটি শেষে স্কুল খোলার পর এদিন তাই বিশেষ পঠনপাঠন হয়নি। তবে ধীরে ধীরে উপস্থিতি আবার স্বাভাবিক হবে বলে মনে করছে শিক্ষক মহল।
অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস নামক সংগঠনের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি মানস ভট্টাচার্য বলেন, ‘দীর্ঘ ছুটির পর এদিন স্কুল খোলার ফলে পড়ুয়াদের সংখ্যা কম রয়েছে। তবে এতে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। ধীরে ধীরে পড়ুয়াদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে।’
যখন যোগ্য-অযোগ্য শিক্ষক নিয়ে রাজ্যে চূড়ান্ত ডামাডোল চলছে, তখনই গত ৩০ এপ্রিল রাজ্যের স্কুলগুলিতে হঠাৎ করে গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়। আলিপুরদুয়ার জেলা সহ উত্তরবঙ্গের কোথাও সেভাবে তো গরমই পড়েনি। তার মধ্যেই হঠাৎ ছুটির ঘোষণায় বিতর্কও দানা বাঁধে। বেসরকারি স্কুলগুলো খোলা থাকলেও সরকারি স্কুল বন্ধ কেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এসব নিয়ে চর্চার মধ্যেই এক মাস কেটে যায়। আবার স্কুল খোলার সময় চলে আসে।
ম্যাক উইলিয়াম হাইস্কুলের টিচার ইনচার্জ অনিলচন্দ্র রায় বলেন, ‘দীর্ঘ ছুটির রেশ এখনও কাটেনি। সেজন্য এদিন পড়ুয়াদের উপস্থিতি কম ছিল। স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে ছুটির মধ্যে। সেজন্য এদিন স্কুল ছুটি থাকতে পারে ভেবেও অনেকে আসেনি বলে মনে হচ্ছে।’
বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুল ছাড়াও ম্যাক উইলিয়াম হাইস্কুল, আলিপুরদুয়ার হাইস্কুল সহ শহরের একাধিক বড় স্কুলগুলিতে এদিন একই ছবি দেখা গিয়েছে। গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলিতেও উপস্থিতির করুণ ছবি। অনিলের মতোই নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির আলিপুরদুয়ার জেলা সম্পাদক জয়ন্ত সাহাও মনে করছেন, দীর্ঘ ছুটির রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি পড়ুয়ারা। তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি ভাস্কর মজুমদার বলেন, ‘দীর্ঘ ছুটির পর এমন পরিস্থিতি চেনা দৃশ্য। অনেক অভিভাবকরা মনে করেন প্রথম দিন ক্লাসরুম সাফাইয়ের কাজ চলে। সেজন্য প্রথম দিকে অনেকে আসতে চায় না।’
ছুটি শুরু হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করার পর তা নিয়ে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু স্কুল খোলার সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে বিশেষ প্রচার হয়নি বলে দাবি করেছে অভিভাবকদের একাংশ। তাই এদিন স্কুল খোলার ব্যাপারে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার অনেক অভিভাবকই অবগত নন বলে মনে করা হচ্ছে। তার ফলেই এমন পরিস্থিতি বলে অনুমান অনেকের।