সুভাষ বর্মন, পলাশবাড়ি: নির্মীয়মাণ মহাসড়কের কারণে পানীয় জলের সমস্যা যেন কিছুতেই মিটছে না। মাসখানেক আগে রাস্তার কালভার্টের কাজ করতে গিয়ে পিএইচই-র পাইপ ভেঙে যায়৷ পরে তা ঠিক করা হয়। তবে এবার আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) পলাশবাড়ির (Palashbari) বহু পুরোনো সনজয় কাঠের সেতুটি ভাঙা পড়েছে। আর সেই কাঠের সেতুর পাশেই ছিল পিএইচই-র জলের পাইপ। সেই পাইপও ভাঙা পড়েছে। তাই দশদিন ধরে সনজয় নদীর পশ্চিম প্রান্তের একাধিক গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছাচ্ছে না। ওই এলাকার প্রায় ৬ হাজার মানুষ জল পাচ্ছেন না। কেউ জারের জল কিনে খাচ্ছেন। কেউ নলকূপের জল খেতে বাধ্য হচ্ছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। পিএইচই-র আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি নিজে গিয়ে পলাশবাড়ি এলাকা দেখে এসেছি। সেখানে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বিকল্প জায়গা করে দিলেই পাইপ ঠিক করে দেওয়া হবে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত যাতে পরিষেবা স্বাভাবিক করা যায়।’
এদিকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ পুরো দায় পিএইচই-র উপরেই চাপিয়েছে। মহাসড়কের প্রকল্প ইনচার্জ বিবেক কুমারের কথায়, ‘সামনেই বর্ষাকাল। এখন দ্রুতগতিতে সেতুর কাজগুলি করতেই হবে৷ সেই চেষ্টা চলছে। এখন পাইপলাইন স্থানান্তরের দায়িত্ব পুরোপুরি পিএইচই-র। সেই কাজ ওই দপ্তরই করবে।’
দীর্ঘদিন ধরে পলাশবাড়ির দুটি পাম্পহাউসের মাধ্যমে পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামগুলিতে পানীয় জল পরিষেবা দেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি নির্মীয়মাণ মহাসড়কের পাশেই মেজবিলে পিএইচই-র একটি নতুন রিজার্ভার তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই রিজার্ভার থেকে জল পরিষেবা এখনও চালু হয়নি। তাই এখনও এলাকাবাসীর ভরসা ওই দুটি পাম্পহাউসের জল৷ কিন্তু মহাসড়কের কাজ শুরু হতেই সেই পরিষেবাতেও মাঝেমধ্যে বিঘ্ন ঘটছে। এর আগে পলাশবাড়ি বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটি কালভার্ট তৈরি করতে গিয়ে জলের পাইপ ভেঙে ফেলা হয়। তখন দু’সপ্তাহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জল সরবরাহ বন্ধ ছিল। পরে সেটি ঠিক করা হয়। আবার মহাসড়কের পাশে শিলবাড়িহাট হাইস্কুল, শিলবাড়িহাট আরআর প্রাইমারি স্কুল, শিলবাড়িহাট আরআর জুনিয়ার বালিকা বিদ্যালয়, শিলবাড়িহাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও কয়েক মাস ধরে পিএইচই-র পানীয় জল বন্ধ। মহাসড়কের কাজে পাইপ ভাঙাতেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্কুলগুলিতে জল যাচ্ছে না। এবার কাঠের সেতুর সঙ্গে পাইপ ভাঙা পড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় জল বন্ধ হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে সনজয় নদীর পশ্চিমদিকের গ্রামগুলিতে এখন কোনওভাবেই জল আসছে না।
নিউ পলাশবাড়ি এলাকার তরুণ পার্থিব রায় প্রধানের কথায়, ‘সেতুটি যখন ভাঙা হচ্ছিল তখন আমরা ভেবেছিলাম ক’দিনের মধ্যে হয়তো জলের পাইপটি ঠিক করা হবে। কিন্তু পাইপ ভাঙার দশদিন হল। এখনও প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। বাধ্য হয়ে জারের জল কিনে খেতে হচ্ছে।’ পুঁটিমারি মোড়ের বাসিন্দা মহানন্দ বিশ্বাস কখনও পলাশবাড়ি গিয়ে জল নিয়ে আসছেন। আবার কোনওদিন বাড়ির নলকূপের জলই খাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘পানীয় জলের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা বন্ধ করে রাস্তার কাজ চলতে পারে না। দ্রুত পরিষেবা ঠিক না হলে এলাকার মানুষ আন্দোলনে নামবেন।’ নিউ পলাশবাড়ি, অঞ্চলপাড়া, পশ্চিম কাঁঠালবাড়ি, পুঁটিমারি মোড়, মরিচঝাঁপির একাংশ এলাকায় পানীয় জল মিলছে না।