আলিপুরদুয়ার: ভাণ্ডারা, নাকি কোনও ফাইভ স্টার হোটেল! শিবরাত্রির সকালে জয়ন্তীর মহাকালধামের রাস্তায় চলতে চলতে এমন সন্দেহ হল বটে। শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে এইসময় মহাকালধামে জমায়েত করছেন প্রচুর পুণ্যার্থী। যাতায়াতের সেই পথেই ভাণ্ডারা সাজিয়ে বসেছেন অনেকেই। সেগুলিতে যেন নিরামিষ মেনুর প্রতিযোগিতা চলছে। রান্নায় যেন একে অপরকে টেক্কা দিতে তৈরি সকলে।
মন্দিরের রাস্তায় ভাণ্ডারাগুলিতে নামীদামি খাবারেরও ছড়াছড়ি। সাতসকালে কোথাও মিলছে গরম গরম চা আর বিস্কুট। কোথাও আবার লুচির সঙ্গে ছোলার ডাল। কেউ বা কফির সঙ্গে স্ন্যাকস দিয়ে নজর কাড়ছেন। কেউ আবার গরম ঘুগনির সঙ্গে মুড়ি আর লাল চা বিলিতেই মন দিয়েছেন।
এদিন সকালে এভাবেই এলাকায় জলখাবারের আয়োজন করতে দেখা গেল বিভিন্ন জেলা এমনকি ভিনরাজ্য থেকে ভাণ্ডারা নিয়ে আসা দলগুলিকে। সারারাত ধরে দীর্ঘ লাইন দিয়ে বড় মহাকালের মন্দিরের শিবলিঙ্গে জল ঢালতে যাওয়ার পথে ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ছেন পুণ্যার্থীরা। ফলে পুজো দিয়েই ভাণ্ডারাগুলিতে ভিড় করছেন তাঁরা। জয়ন্তী বাজার থেকে ছোট মহাকালের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। সেখান থেকে দুর্গম ভুটান পাহাড়ে আরও চার কিলোমিটার চড়াই উতরাই পেরিয়ে বড় মহাকালে পৌঁছাতে হয়। বাজার থেকে জয়ন্তী নদীকে বাঁ হাতে রেখে হাঁটা পথে পুণ্যার্থীরা এগিয়ে চলেন। অবশ্য ভক্তদের বিরাট একটা অংশ গাড়ি নিয়ে পুলিশ পয়েন্ট অবধি পৌঁছাচ্ছেন। তারপর হাঁটাই ভরসা।
এই পথেই জয়ন্তী বাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে হাতিনালা এলাকা থেকে ভাণ্ডারাগুলি শুরু হয়েছে। হাউদানালা, খয়েরনালা, বাউন্ডারিনালা হয়ে ভুটানে অবস্থিত ছোট মহাকাল পর্যন্ত দীর্ঘ পথে ভাণ্ডারা নিয়ে এসেছেন শিবভক্তরা। বুধবার প্রাতরাশের শেষেই ভাণ্ডারাগুলিতে দুপুরের তৎপরতা শুরু হতে দেখা গেল। হাতিনালা থেকে ছোট মহাকাল পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি ভাণ্ডারা বসেছে। বেশিরভাগেরই নাম জয়ন্তী মহাকাল ভাণ্ডারা। দিনহাটা, মাথাভাঙ্গা, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার সহ বিহার ও অসম থেকেও সেগুলি এসেছে। এছাড়াও নীলকণ্ঠ, ভোলানাথ নামেও বেশ কয়েকটি ভাণ্ডারা রয়েছে।
আলিপুরদুয়ার থেকে আসা কৈলাস ভাণ্ডারার দুপুরের মেনুতে ছিল ফ্রায়েড রাইস, মুগের ডাল, আলুপোস্ত, সর্ষে ঝিঙে, এঁচোড়ের ডালনা, মটর পনির, চাটনি, নলেন গুড়ের মিষ্টি, পাঁপড় ইত্যাদি। সেখানকার নীলাদ্রি নিয়োগী বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরেই আমরা ভাণ্ডারা নিয়ে আসছি। পুণ্যার্থীদের সেবা করতে ভালো লাগে তাই এখানে আসা।’
আবার সকলের তরে ভাণ্ডারায় পাওয়া গেল ভাত, ডাল, ঝিঙ্গেপোস্ত, পটলের ডালনা, পনির মশলা, দই, মিষ্টি, চাটনি, পাঁপড় ইত্যাদি। এই ভাণ্ডারায় ছিলেন উজ্জ্বল সাহা, প্রসেনজিৎ চাকিরা। উজ্জ্বল বলেন, ‘গত তিনদিন ধরে আমরা এখানে রয়েছি। এই তিনদিনে প্রায় ১৫ হাজার পুণ্যার্থীদের আমরা সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আশা করি আরও কয়েক হাজার মানুষের সেবা করার সুযোগ পাব।’