জটেশ্বর: সম্প্রতি জটেশ্বর-তপসিতলা রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তাটি আগের চেয়ে চওড়া হবে। আর সেই রাস্তা চওড়া হওয়ায় জটেশ্বর বাজারের ভেতরের প্রায় ৩০০ মিটার এলাকাজুড়ে দু’ধারে থাকা স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ৪০০টি দোকানের সামনের অংশ ভাঙা পড়বে। রাস্তার ধারের অস্থায়ী দোকানগুলি সম্পূর্ণ উচ্ছেদও হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
পাকা দোকানঘর ভাঙা পড়েলে নতুন করে গাঁটের কড়ি খরচ করে দোকান বানাতে হবে। আর এনিয়েই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জটেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ীদের কপালে। তবে দোকান ভাঙার আগে সড়ক কর্তৃপক্ষকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। জেলা পরিষদের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুদর্শন সাহা জানান, প্রায় ৩০০ মিটার এলাকাজুড়ে রাস্তার দু’ধারে দোকানপাট রয়েছে। কাজের মাঝেই দোকানদারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
জটেশ্বর বাজারের স্থানীয় দোকানদার অসীম বর্ধনের কথায়, ‘দিনকয়েক আগে ঠিকাদারি সংস্থা দোকানের সামনের ১ মিটার রাস্তা ছেড়ে দিতে বলেছে। এখনও বুঝে উঠতে পারছি না কী করব। এই ব্যবসা দিয়েই আমাদের সংসার চলে।’ একই বক্তব্য রবি দাস, কমল সরকার সহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর। স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য তনুশ্রী রায় বিষয়টি নিয়ে ব্লক প্রশাসন ও ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে জটেশ্বর মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিজিৎ বল জানান, ঠিকাদারি সংস্থা এখনও তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেননি।
জটেশ্বর কাছারি মোড় থেকে তপসিতলা পর্যন্ত ৯.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার অধীনে নতুনভাবে তৈরি করবে ডব্লিউবিএসআরডিএ কর্তৃপক্ষ। তাই রাস্তার বেশ কয়েকটি জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে সড়ক কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে কাছারি মোড় থেকে পোস্ট অফিস পর্যন্ত ৩০০ মিটার রাস্তায় ৪০০টি দোকান রাস্তার একেবারে কাছাকাছি রয়েছে। সেগুলির সামনের ১ মিটার জায়গা সড়কের কাজে ভাঙা পড়বে। সেইমতো দোকানদারদের জায়গা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ঠিকাদারি সংস্থা। ঠিকাদারি সংস্থার নির্দেশ পেয়ে মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ী মহলে।
পান ব্যবসায়ী প্রবীর সাহার কথায়, ‘ছোট একটি দোকান দিয়ে আমার সংসার চলে। দোকানের সামনের অংশ ভাঙা পড়লে নতুন করে দোকান বানাতে হবে। আমার কাছে এখন নতুন দোকান বানানোর টাকা নেই। কী করব বুঝতে পারছি না।’
স্থায়ী দোকানদারদের খানিকটা অংশ তো ভাঙা পড়বেই। পাশাপাশি জটেশ্বর বাজারের রাস্তার ওই ৩০০ মিটারের মধ্যে থাকা অস্থায়ী দর্জি, চায়ের দোকান, পানসুপারি সহ প্রায় কুড়ি-পঁচিশটি দোকানের সম্পূর্ণ অস্তিত্বই সংকটে। রাস্তার ধারে এমনই এক অস্থায়ী দোকান চালান দর্জি জগদীশ রায়। তিনি বললেন, ‘রাস্তা সম্প্রসারণের পর নর্দমা তৈরি হলে তার ওপর বসতে পারব না। আমাদের সম্পূর্ণভাবে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।’
এদিকে, জটেশ্বর বাজারের রাস্তা সম্প্রসারণের এই সমস্যায় তৃণমূল-বিজেপি, উভয় দলই ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। বিজেপি নেতা তথা ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন বলছেন, ‘জমির বিষয়টি রাজ্য সরকারকে দেখতে হবে। সেখানে কতজন ব্যবসায়ীর দোকানঘর ভাঙা পড়বে, তাঁরা ভবিষ্যতে কী করবেন সবটা রাজ্য সরকারকে দেখতে হবে। আমরা ব্যবসায়ীদের পাশে আছি।’
অন্যদিকে, ফালাকাটা ব্লক তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় দাসের দাবি, ‘দোকানদাররা মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা করুক বিষয়টি নিয়ে। আমরাও দলের তরফে আলোচনা করে দেখব। দোকানদাররা ক্ষতিপূরণ পান, সেটা আমরাও চাই।’