অভিজিৎ ঘোষ, সোনাপুর: চিলাপাতার নল রাজার গড়। আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের (Alipurduar) চিলাপাতা জঙ্গলের অন্দরে থাকা প্রাচীন এই স্থাপত্য নিয়ে কম চর্চা নেই। ১৯৬৮ সালে রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে সেখানে খননকার্যও চালানো হয়। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী এই নল রাজার গড়কে গুপ্ত যুগের একটি দুর্গ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রায় ১৫০০ বছরের পুরোনো এই স্থাপত্য যদিও এখনও হেরিটেজ তকমা পায়নি, এখনও সেটাকে নিয়ে রয়েছে অনেক রহস্য। এই স্থাপত্যকে হেরিটেজ তকমা দিতে কাজ শুরু করল আলিপুরদুয়ার হেরিটেজ সোসাইটি। শনিবার সংগঠনের সদস্যরা জঙ্গলে ওই গড় পরিদর্শনে যান। সেখানে ছিলেন প্রশাসনিক আধিকারিক এবং বন দপ্তরের কর্তারাও।
হেরিটেজ সোসাইটির সহ সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়ের কথায়, ‘আলিপুরদুয়ার শুধু জঙ্গলে ঘেরা একটা জেলা নয়। জেলার সভ্যতা ও সংস্কৃতি যথেষ্ট বিকশিত। সেগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরা এবং যথাযোগ্য মর্যাদা পাইয়ে দিতেই আমার কাজ করব।’ কয়েকদিন আগেই জেলায় হেরিটেজ সোসাইটি গঠন করা হয়েছে। এদিনই প্রথম সোসাইটির সদস্যরা কোনও পুরোনো স্থাপত্য পরিদর্শনে গেলেন। বর্তমানে ওই গড়ের একটি প্রাচীরের কিছু অংশই মাটির ওপরে রয়েছে। সেটাও দেখা গেল আগাছায় ভরে গিয়েছে। প্রাচীরের মাপজোখ নেন গবেষকরা। স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলেন। বনকর্মীদের পাহারায় পুরো প্রক্রিয়া চলে।
সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক শুভময় দত্ত বলেন, ‘পরিদর্শনকালে সোসাইটির প্রতিনিধিরা দুর্গটির ভৌত গঠন, প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান, পরিবেশগত পরিস্থিতি ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। ওই গড়ের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য দাবি জানানো হবে।’
এলাকাটি সাধারণ মানুষের সামনে উঠে এলে যেমন আগ্রহ বাড়বে, তেমনই পর্যটনের দিক থেকেও চিলাপাতা গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। এদিন ওই পরিদর্শনে তিনিও ছিলেন। নল রাজার গড় যেন হেরিটেজ তকমা পায় সেই দাবি তিনি বিধানসভায় তুলবেন বলেও জানান।
অন্যদিকে, এদিন নল রাজার গড় পরিদর্শন করার পর হেরিটেজ তকমা পেতে প্রশাসনিকভাবেও রাজ্য সরকারকে জানানো বলে জানান আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক দেবব্রত রায়। জেলার এমন ঐতিহাসিক নিদর্শন জনসমক্ষে আসা দরকার বলেও মত তাঁর। ইতিহাসপ্রেমী পড়ুয়াদের কাছেও এটা গুরুত্বপূর্ণ রসদ হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সরিৎকুমার চৌধুরীর কথায়, ‘নল রাজার গড়ের যে ইতিহাস সেটা ছাত্রছাত্রীদের জানা উচিত। শিক্ষামূলক ভ্রমণে এখানে আসা যেতে পারে।’ জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও পারভিন কাশোয়ান জানান, সঠিক তথ্য পেলে পর্যটকদের জন্য সেখানে নানা তথ্য দিয়ে বোর্ড লাগানো যেতে পারে। সবটাই রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়েই করা হবে।