বর্তমানে নির্বিচারে অরণ্য নিধন হচ্ছে। তার প্রভাব ভীষণভাবে পড়ছে প্রকৃতির ওপর। একের পর এক জঙ্গল ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে পাহাড়েরও। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, উষ্ণায়নের মতো ঘটনা ঘটছে। এসব কথাই উঠে আসবে স্বামীজি ক্লাবের পুজোর থিমে। খতিয়ে দেখলেন আয়ুষ্মান চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) শহরের কলেজ হল্ট দিয়ে বেলতলা মোড় পার হয়ে বাঁ দিকে বেঁকে সোজা রাস্তা বরাবর গেলেই স্বামীজি ক্লাবের মণ্ডপ। এই মণ্ডপে ঢুকলেই চোখে পড়বে দুটি অসুর। দুজনকেই বধ করবেন দেবী দুর্গা। কিন্তু দুটি অসুর কেন? পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার বার্তা দিতেই এই উদ্যোগ, বলছেন সেই ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তারা। একটি অসুর হল বিশ্ব উষ্ণায়ন ও আরেকটি পরিবেশ দূষণ। তাঁদের পুজোর ৭৬তম বর্ষে এই চমকই দিতে চলেছে বেলতলার স্বামীজি ক্লাব।
‘সবুজ যেন নতুন রূপে, ধরা দেবে বেলতলাতে’। এই স্লোগানকে সামনে রেখেই দুর্গাপুজোর (Durga Puja) আয়োজন করতে চলেছে স্বামীজি ক্লাব। উদ্যোক্তাদের দাবি, তাঁদের এবারের মণ্ডপ সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। মণ্ডপের কাজ অনেকদিন আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন একদিকে মণ্ডপের কাজ চলছে জোরকদমে। আরেকদিকে, মণ্ডপ চত্বরেই প্রতিমা ও জোড়া অসুর নির্মাণের কাজ চলছে।
পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার বার্তা দিতেই এমন উদ্যোগ। বলছিলেন ক্লাব সদস্য সত্যজিৎ নিয়োগী, শুভজিৎ ধর-রা। এবারে পুজোর বাজেট ১৯ লক্ষ টাকা। ৪০ ফুট উঁচু মণ্ডপ ৪ হাজার চারাগাছ দিয়ে সাজানো হচ্ছে। সেখানে মানিপ্ল্যান্ট, ডেসিনা, এরিকাপাম সহ অন্যান্য গাছের চারা থাকবে। পাশাপাশি বাঁশ, পাটকাঠি সহ পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হয়ে চলেছে। মণ্ডপের সামনে একটি মা দুর্গার মুখ থাকবে। তার চারিদিকে ডালপালা দিয়ে সাজানো হবে। সেই মুখের দু’পাশে দুটি মডেল থাকবে। একটিতে দেখানো হবে গাছ পৃথিবীকে রক্ষা করছে। আরেকটিতে দেখানো হবে, গাছের কোলে শিশু।
থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই বানানো হচ্ছে প্রতিমা। ২৫ ফুট উঁচু প্রতিমায় দুর্গা থাকছেন প্রকৃতির রূপে। আলোকসজ্জার ক্ষেত্রেও বিরাট আয়োজন রয়েছে এবারে। ৪টি আলোর গেট থাকবে। সঙ্গে চন্দননগরের আলোকসজ্জা। মণ্ডপের পাশে এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হবে ডুয়ার্সজুড়ে কীভাবে ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি। পঞ্চমীতে পুজোর উদ্বোধনের দিন কয়েকশো চারাগাছ বিলি করা হবে।
ওই ক্লাবের মিডিয়া কনভেনার ঋষিকেশ সরকারের কথায়, ‘আমরা এবার একদম অন্যভাবে কিছু অভিনব করার চেষ্টা করেছি। আশা করি সকলের খুব ভালো লাগবে।’ সেখানে গত ১ মাস ধরে দিনরাত এক করে কাজ করে চলেছেন ধীরাজ বর্মন, বিপ্লব দাসরা। তাঁরা জানালেন, দিনে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা মণ্ডপের কাজ করছেন। মণ্ডপশিল্পী শীর্ষেন্দু মহলানবিশের আশা, ‘এবারে এই ক্লাবের পুজোর মণ্ডপ দেখতে ভিড় জমাবেন দর্শনার্থীরা। একটা নতুন কিছু করতে চলেছি আমরা।’