আলিপুরদুয়ার: পরীক্ষা দিচ্ছে ছেলে। কিন্তু মায়ের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। বারবার মোবাইল ফোনটি খুলছেন, আর খবর দেখছেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস হল না তো? কোথাও কোনও কেন্দ্রে অঘটন হল না তো? এনিয়ে খবরের চ্যানেলে চোখ রেখেছিলেন শর্মিষ্ঠা দেবনাথ। তাঁর মনোযোগ ভাঙল আরেক অভিভাবকের ডাকে। শর্মিষ্ঠাকে তাঁদের আড্ডায় ডাকলেন। সেখানেই সকলে মিলে আলোচনা করছিলেন মাধ্যমিক সংক্রান্ত নানা খবর নিয়ে।
এই তো গেল আলোচনা। অভিভাবকদের অনেকে আবার বান্ধবীও পাতিয়ে নিয়েছেন স্কুলের বাইরে। সেই ‘বান্ধবীর’ গ্রুপ মিলে কখনও ফুচকা খেতে যাচ্ছে, আবার কখনও সাংসারিক আলাপ-আলোচনায় একে অপরের সঙ্গী হচ্ছেন।
আলিপুরদুয়ারের বাবুপাড়া হাইস্কুল, বাবুপাড়া গার্লস হাইস্কুল, ম্যাক উইলিয়াম হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, আলিপুরদুয়ার নিউটাউন গার্লস হাইস্কুলের সামনে গিয়ে দেখা যায় অভিভাবকদের জমজমাট আড্ডা। পরীক্ষা শুরু হলে কেউ চলে যান, কেউ আবার সেখানেই বসে থাকেন। বাড়ি থেকেই অনেকে কাগজ নিয়ে আসেন, কেউ আবার পাশের দোকান থেকে কাগজ নেন পেতে বসার জন্য।
অভিভাবিকা বাবলি সরকার জানান, ছেলেকে স্কুলে নিয়ে আসার পর থেকে অনেক বান্ধবী হয়েছে। তাঁরাও সন্তানকে ছাড়তে এসেছেন পরীক্ষাকেন্দ্রে। তাই সকলে মিলে আড্ডা মেরে পরীক্ষার সময়টুকু কাটিয়ে দিই।
আড্ডা হলে খাওয়াদাওয়াও হবে। তাই ঝালমুড়ি, চাটের মতো স্ন্যাক্স নিয়ে বসেন অনেকে। কেউ আবার দল বেঁধে ফুচকার দোকানে ঢুঁ মারেন। দীপিকা ঘোষ বলেন, ‘ছেলে পরীক্ষা দিলেও আমাদের অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু আড্ডা-গল্পে কখন সময় কেটে যায় আমরা টেরই পাই না। একসঙ্গে খাইও আমরা। ছেলে নিজের মতো পরীক্ষা দিচ্ছে, আমিও আমার মতো করে সময় কাটাচ্ছি।’
প্রীতি কুণ্ডু নামের এক অভিভাবিকা আবার পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে অল্প দূরে থাকা দিদির বাড়ি থেকে ঘুরে আসেন। প্রীতি বলেন, ‘প্রথম পরীক্ষার দিনই দিদি বলেছিল ওর বাড়ি যেতে। কিন্তু প্রথম দিনে চিন্তা ও নানা কারণে আর যাওয়ার কথা মাথায় আসেনি। তাই দ্বিতীয় পরীক্ষার দিন গেলাম। দিদির সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়ে আসি।’
অবশ্য সকলে কিন্তু খোশমেজাজে থাকেন না। কেউ থাকেন মারাত্মক চিন্তায়। গোলাপি দে’ও তাঁদের মধ্যে একজন। মুখ ভার করে বসেছিলেন পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে। তিনি বলেন, ‘মেয়ে ভেতরে কেমন পরীক্ষা দিচ্ছে কে জানে, কিছুটা তো চিন্তা আছেই। টেনশন করে কিছু হবে না জেনেও শত হোক, আমি তো মা। তাই চিন্তা হবেই।’
কেউ আবার এই ফাঁকা সময়টা কাজে লাগাচ্ছেন নানা কাজে। এই যেমন ম্যাক উইলিয়াম হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের সামনে অভিভাবকদের পরীক্ষাকেন্দ্রের পাশে থাকা ফুল, ফলের দোকান থেকে কেনাকাটা করতে দেখা যায়। তবে যে যাই করুক, দিন শেষে পরীক্ষা নির্বিঘ্নে শেষ হওয়ার পর নিজের সন্তানদের দেখে স্বস্তি ফেরে অভিভাবকদের মনে।