রাঙ্গালিবাজনা: ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা তৎকালীন শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির যুগ্ম এলাকার তৎকালীন বিধায়ক যজ্ঞেশ্বর রায় মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের রাঙ্গালিবাজনায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাঙ্গালিবাজনা মোহনসিং হাইস্কুল। যজ্ঞেশ্বর পরিচিত ছিলেন ‘ডুয়ার্স গান্ধি’ নামে। তাঁর তৈরি এই স্কুলের পড়ুয়ারা দীর্ঘদিন ধরে জেলা তো বটেই এমনকি রাজ্যের নামও উজ্জ্বল করেছে নিজেদের যোগ্যতায়। প্রয়াত মন্ত্রী যোগেশ বর্মন, রিজার্ভ ব্যাংকের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার বাবুরাম কার্জি, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ডেপুটি সেক্রেটারি মুক্তা নার্জিনারি- এরকম আরও অসংখ্য নাম রয়েছে এই স্কুলের প্রাক্তনীর তালিকায়। অথচ এমন তারকাখচিত প্রাক্তনী থাকার পরেও বর্তমানে ডুয়ার্সের অন্যতম পুরোনো এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি চূড়ান্ত সমস্যায়। শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়াই বিরাট চ্যালেঞ্জ স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। বর্তমানে সেখানে বিজ্ঞান (পিওর সায়েন্স) এবং অঙ্কের কোনও স্থায়ী শিক্ষক নেই। পড়ুয়াদের বিজ্ঞান পড়ানো এবং অঙ্ক শেখাতে কর্তৃপক্ষকে ভরসা করতে হচ্ছে শারীরশিক্ষার শিক্ষক এবং পার্ট-টাইম শিক্ষকদের ওপর। এদিকে ১২ বছর ধরে ওই স্কুলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াচ্ছেন একজন পার্শ্বশিক্ষক।
বর্তমানে ওই স্কুলে দেড় হাজার পড়ুয়া রয়েছে। প্রধান শিক্ষক সহ মোট শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা একুশ। যাঁদের মধ্যে পাঁচজন আবার ২০১৬ সালের ব্যাচের। সবমিলিয়ে চূড়ান্ত সমস্যায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক অমল রায়ের কথায়, ‘ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার অনুপাতে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা দীর্ঘদিন ধরে কম। অনেকে অবসর নিয়েছেন। অনেকে আবার জেনারেল ট্রান্সফার নিয়ে অন্য স্কুলে যোগ দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর সমস্যা আরও বেড়েছে।’ তিনি জানান, পরিস্থিতি সামলাতে দুজনকে অঙ্ক, একজনকে পিওর সায়েন্স এবং একজনকে অঙ্কের পার্ট-টাইম শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও পার্শ্বশিক্ষক-পার্শ্বশিক্ষিকা রয়েছেন ছয়জন।
স্কুল সূত্রে খবর, পার্ট-টাইম শিক্ষকদের সাম্মানিক হিসেবে প্রতি মাসে সামান্য অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়। তাই ওঁদের ওপর বাড়তি ক্লাস চাপানোও মুশকিল। এজন্য পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত অঙ্ক করান শারীরশিক্ষার শিক্ষক ধনীরাম ওরাওঁ এবং নরেশ শৈব। এদিকে ২০১৩ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক কানাইলাল রায় অবসর নেওয়ার পর থেকে পদটি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ১২ বছর ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াচ্ছেন পার্শ্বশিক্ষক। ভূগোল এবং জীবনবিজ্ঞান বিষয়ে একজন করে শিক্ষক রয়েছেন। পিওর সায়েন্সের একজন শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তিনি ২০১৬ সালের ব্যাচের। অঙ্কের শিক্ষকের দুটি পদ বছরের পর বছর ফাঁকা। এবিষয়ে পরিচালন সমিতির সভাপতি নবজ্যোতি নার্জিনারিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য বলছেন, ‘সমস্যা নিরসনে পরামর্শ করতে শীঘ্রই বৈঠক করা হবে।’