সুভাষ বর্মন, পলাশবাড়ি: আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের (Alipurduar) দুই নাবালকের বিরুদ্ধে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী। তবে তড়িঘড়ি পুলিশ দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করায় প্রকাশ্যে প্রতিবাদ আন্দোলনে নামছেন না কেউ। কিন্তু এমন জঘন্য ঘটনার জন্য দুই নাবালকের শাস্তির দাবি তুলেছেন নাবালিকার পরিজন ও প্রতিবেশীরা। অভিযুক্ত দুই নাবালকের বয়স ১৪ থেকে ১৫ বছর। তাদের মধ্যে এমন যৌন লালসার উদ্রেক হল কীভাবে সেটাও প্রশ্নের।
যদিও মনোবিদরা বলছেন, এর নেপথ্যে একাধিক কারণ থাকতে পারে। তারমধ্যে অন্যতম কারণ অবশ্যই মোবাইল ফোন। কারণ, মোবাইলে অশ্লীল রিলস বা ভিডিও দেখেই দুই নাবালক প্রভাবিত হতে পারে। দুটি ছেলেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। যদিও গোটা বিষয়ে দুই নাবালকের পরিবারের মুখে কুলুপ।
আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের মনোবিদ নীলাদ্রি নাথের কথায়, ‘এসব আচরণ একদিনে তৈরি হয় না। সন্তানদের চরিত্র কেমন তা অভিভাবকরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন। তারপর অভিভাবকদের উদাসীনতায় এরকম অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়তে থাকে। কম বয়সেই যৌন লালসা, নেশা করা থেকে অসামাজিক নানা কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে নাবালকরা।’
এক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘মোবাইলকে নেগেটিভ কাজে ব্যবহার করলে এমন প্রবৃত্তি তৈরি হতেই পারে। যদিও এখন পর্নোগ্রাফি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু ফেসবুকে অশ্লীল রিলস বা ইউটিউবের ভিডিওয় মোবাইল ব্যবহারকারীদের আসক্তি বাড়ে। দুই নাবালকের ক্ষেত্রে এমনটা হতেও পারে। এছাড়া তাদের আশপাশের সামাজিক ও পারিবারিক পরিস্থিতি কেমন সেটাও দেখতে হবে।’
১৫ জুলাই সন্ধ্যায় একটি ফাঁকা জায়গায় দশ বছরের ওই নাবালিকাকে দুই নাবালক ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। নাবালিকা ঠাকুরদার বাড়িতে বেড়াতে এসে এমন নির্যাতনের শিকার হয়। পরে ঘটনার কথা জানতে পেরে নাবালিকার মা বৃহস্পতিবার রাতে সোনাপুর ফাঁড়িতে অভিযোগ জানান। পুলিশ দ্রুত দুই নাবালককে গ্রেপ্তার করে জলপাইগুড়ির জুভেইনাল কোর্টে পাঠায়।
এদিকে, ওই নাবালিকার মেডিকেল পরীক্ষা করা হয় আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে। এদিনও মেয়ের সঙ্গে হাসপাতালেই ছিলেন মা। নাবালিকার মা বললেন, ‘ওই দুটি ছেলে আমার মেয়ের সর্বনাশ করেছে। ওদের কঠোর শাস্তি চাই। কোনওভাবেই যাতে তারা ছাড়া না পায়।’
এদিকে দুই নাবালকের পরিবার এ নিয়ে কথা বলতে নারাজ। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, দুই নাবালকই এলাকায় দুরন্ত। একটি হাইস্কুলে দুজনে পড়ে। তবে বাড়িতে তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। সন্ধ্যা হলেই মোবাইল দেখার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। রাস্তার মোড়ে বহুবার তাদের দুজনকে স্থানীয়রা মোবাইল ঘাঁটতে দেখেছেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘অভিভাবকদের চরম উদাসীনতা রয়েছে৷ এজন্য ছেলে দুটি খারাপ লাইনে চলে গিয়েছে। আমরাও চাই এমন ঘটনার জন্য দুজনের শাস্তি হোক।’ নাবালকের ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয় বলেন, ‘কেন এরকম ঘটনা ঘটল তা আমরাও বুঝতে পারছি না।’