অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার : হাসপাতালে রোগী ভর্তি। চিকিৎসকদের তাঁকে দেখতে হবে সকালে ও রাতে। তবে দুই বেলা তো দূরের কথা, কোনওমতে একবেলা হাসপাতালে এসে রোগী দেখে দায়িত্ব সারছেন চিকিৎসকরা। বেশ কয়েক বছর থেকেই আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ইন্ডোর পরিষেবার ক্ষেত্রে এই অভিযোগ উঠেছে।
জেলা হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসকদের সময়মতো আসা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে আগে থেকেই। তেমনই আবার ইন্ডোরের ক্ষেত্রেও অনেক চিকিৎসক ফাঁকি দিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসকের এই অনিয়মিত হাসপাতালে আসার কারণে সমস্যায় পড়তে হয় রোগীদের। রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও সময়মতো চিকিৎসকদের দেখা পান না। হাসপাতালের ডিউটিতে ফাঁকি দিয়ে চিকিৎসকরা রমরমিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেছেন বলে অভিযোগ। এমনকি কেউ কেউ বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে রোগী দেখছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সমস্যা এতটাই বেড়েছে যে সম্প্রতি জেলা হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকেও এই প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
রোগীকল্যাণ সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্য চিকিৎসকদের রোগী পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। অথচ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পরেও কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা বদল হয়নি। তবে কয়েকজন চিকিৎসক তাঁদের পুরোনো রুটিন বদলেছে বলে জানিয়েছেন রোগীরা। এবিষয়ে জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ পরিতোষ মণ্ডল অবশ্য দাবি করেছেন বৈঠকের পর সমস্যার সমাধান হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রোগীকল্যাণ সমিতি বৈঠকে বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে ডাকা হয়েছিল। সেখানে সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে।’
এদিকে হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মী এবং হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পুরুষ সাধারণ ও মহিলা সাধারণ বিভাগে চিকিৎসকদের যাতায়াত সবথেকে বেশি অনিয়মিত। জেলা হাসপাতালের পুরোনো ভবনের পূর্বদিকে একতলায় রয়েছে মহিলা সাধারণ বিভাগ এবং দোতলায় পুরুষ সাধারণ বিভাগ। সেখানে মেডিসিন, অস্থি, চোখ, নাক, কান গলা সহ বিভিন্ন বিভাগের রোগীদের একসঙ্গে রাখা হয়। এই দুই বিভাগে চিকিৎসকরা সময়মতো আসেন না বলে অভিযোগ। অন্যদিকে শিশু বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ, মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের পরিস্থিতি একটু অন্যরকম। সেখানে চিকিৎসকরা নাকি তুলনামূলকভাবে বেশি সক্রিয়।
বিভিন্ন সময় চিকিৎসকদের দেরি করে আসা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালে। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসকদের আউটডোর ছাড়াও ইন্ডোরে জরুরি বিভাগে ডিউটি করতে হয়। এছাড়াও ইন্ডোরে যে চিকিৎসকের অধীনে যে রোগী ভর্তি হবেন, সেই রোগীকে দু’বেলা এসে দেখবেন সেই চিকিৎসক। আবার বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের অন কলেও রাখা হয়। অন কলে থাকলে জরুরিভিত্তিতে কোনও রোগীকে দেখার প্রয়োজন হলে সেই চিকিৎসককে সেখানে আসতেই হয়। ইন্ডোর ও অন কলের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সব থেকে বেশি কাজ ফাঁকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সিনিয়ার চিকিৎসকরা আবার পিজিটিদের দিয়ে বাড়তি কাজ করিয়ে নেন বলেও অভিযোগ অনেকদিন থেকেই।
এই বিষয়গুলো নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকদের সংগঠন আইএমএ’এর রাজ্য সহ সভাপতি এবং প্রগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসিয়েশনের জেলা এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য ডাঃ সৌম্যজিৎ দত্ত। তাঁর কথায়, ‘চিকিৎসকরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। যা খামতি রয়েছে সেটা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য সবার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’