নয়াদিল্লি: ভারতে পরিচয়পত্র হিসাবে আধার (Aadhaar) কার্ডের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৪ বছর আগে। অথচ এখনও পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে মাত্র ১.১৫ কোটি আধার কার্ড। দেশে বাৎসরিক মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে যা অনেক কম। অর্থাৎ, মৃতদের সিংহভাগের আধার কার্ড এখনও সক্রিয় রয়েছে। আরটিআইয়ের মাধ্যমে করা একটি আবেদনের ভিত্তিতে যে তথ্য সামনে এসেছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। মৃতদের আধার কার্ড অপব্যবহারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।
ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (ইউআইডিএআই) (UIDAI) তথ্য বলছে, ২০২৫-এর জুন পর্যন্ত দেশে আধার কার্ড ধারকের সংখ্যা ১৪২.৩৯ কোটি। রাষ্ট্রসংঘের হিসাবে, ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪৬.৩৯ কোটি। আবার ভারত সরকারের সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম অনুযায়ী ২০০৭-’১৯-এর মধ্যে ভারতে প্রতি বছর গড়ে ৮৩.৫ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক বছরে সংখ্যাটা আরও বাড়ার কথা। বিশেষ করে কোভিড সংক্রমণের বছরগুলিতে। কিন্তু ইউআইডিএআইয়ের তথ্য বলছে, আধার কার্ড চালু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১.১৫ কোটি আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। সিভিল রেজিস্ট্রেশনের হিসাবে কয়েক কোটি মানুষের মৃত্যু হলেও আধারের নিরিখে মৃতের সংখ্যা এক কোটির সামান্য বেশি। অর্থাৎ, মৃতদের ১০ শতাংশের কম জনের আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। ফলে ১৪ বছর আগে মারা গিয়েছেন এমন ব্যক্তিও আধার কর্তৃপক্ষের নথিতে ‘জীবিত’ রয়ে গিয়েছেন।
মৃতের সংখ্যার অনুপাতে আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করার হার এত কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছে ইউআইডিএআই। ভারত সরকারের অধীন সংস্থাটি জানিয়েছে, আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করার বিষয়টি একটু জটিল। এজন্য তাদের রাজ্য সরকারের জারি করা মৃত্যু শংসাপত্র, হাসপাতালের রেকর্ড এবং পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে আধার পোর্টালে আপলোড করা তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হলে আধার কার্ড বাতিল করা যায় না।
উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা মৃতদের আধার কার্ড অপব্যবহারের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। মৃতদের আধার কার্ড ব্যবহার করে সরকারি প্রকল্পগুলিতে বিশেষ করে ভরতুকি যুক্ত পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। মৃত ব্যক্তির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হতে পারে। সমস্যা হতে পারে জনগণনায়। এই সম্ভাবনা ঠেকাতে আধার ডেটাবেস ও মৃত্যুর রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন। রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে ইউআইডিএআইয়ের সমন্বয় বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।