বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য: কয়েকটা দিন বাপের বাড়িতে কাটিয়ে দশমীতে বাড়ি ফেরার পালা হৈমবতীর। যাওয়ার বেলায় তাই তাঁর পাতে চাই তিস্তা নদীর তাজা বোয়াল মাছের পাতুরি দিয়ে পান্তাভাত! আর তা খেয়েই শ্বশুরালয় কৈলাসে ফেরেন উমা। দীর্ঘ ষাট বছর ধরে চলে আসছে এই পরম্পরা। এখানে পুজো আয়োজনের শুরু থেকে দেবীর যাত্রাকালীন নৈবেদ্য সাজানোর ভাবনা বেশি। জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ইয়ুথ ক্লাবের পুজোর এমনটাই রীতি। ৬৩ বছরের পুরনো প্রথা ধরে রাখতে অনেক আগে থেকেই চলে তিস্তা নদীর তাজা বোয়াল মাছের জন্য মাঝি ও জেলেদের খোঁজ। অন্তত ২৫ কেজি মাছের প্রয়োজন। সেটাও ছোট হলে চলবে না!
তাই জেলে এবং মাঝিদের বরাত দেওয়া হয় একমাস আগে। নবমীর রাতে নদীতে নৌকা ভাসিয়ে চলে শিকারের অভিযান। দশমীর ভোরে মাছ পৌঁছে যায় আনন্দনগরের পুজো মণ্ডপে। দেবী ও তার ছেলেমেয়েদের সামনে সুগন্ধি চালের পান্তাভাতের সঙ্গে সরষে বাটা দিয়ে ওই মাছের পাতুড়ির নৈবেদ্য সাজাতে হয় যে! পরে সেটাই প্রসাদ হিসেবে বিলি হয়। ওই প্রসাদের টানে পাঁচ শতাধিক মানুষ ভিড় করেন সেখানে।
রোগমুক্ত জীবনের কামনায় দেবীর সামনে মাগুর মাছ বলি অথবা পান্তাভাত, শাপলা চচ্চড়ি, কচুশাক, পুটি মাছের নৈবেদ্য সাজানোর কথা শোনা যায়। কিন্তু উত্তরে কোনও পুজোয় এমন অভিনব প্রথা নেই, এমনই দাবি উদ্যোক্তাদের। পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মনোজ সাহা জানান, ”১৯৬২ সালে এই পুজোর শুরু। ওই সময় মনস্কামনা পূরণের জন্য পুরোহিতের নির্দেশে দেবীর বিদায়ের দিন বোয়াল মাছের পাতুড়ি ও কচুশাক দিয়ে পান্তাভাত দেওয়া হয়। আজও সেই প্রথা অমলিন।” তাঁর কথায়, ”এখন প্রতি বছর যে প্রয়োজন মতো তিস্তা নদীর তাজা বোয়াল মাছ মিলে যায় সেটা নয়, তবে রীতি টিকিয়ে রাখতে ভরসা বাজারের চালানি বোয়ালে। যদিও দেবীর সামনে সাজানো নৈবেদ্যতে তিস্তার তাজা বোয়াল রাখা হয়। প্রসাদে দেওয়া হয় চালানি বোয়াল।”
মনোজবাবু আরও বলেন, “এখন তিস্তার তাজা বোয়াল জোগার করা বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। জেলে ও মাঝিরা খুব চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতি বছর প্রয়োজন মতো মাছ মেলে না।” তবে তাজা মাছ মেলেনি জন্য হাতগুটিয়ে বসে থাকবেন উপায় নেই উদ্যোক্তাদের। তাই দশমীর ভোর থেকে ব্যস্ততা তুঙ্গে ওঠে। কারণ, বেলা বাড়তে অভিনব প্রসাদের টানে ভিড় উপচে পড়ে মণ্ডপে। লাইন যত দীর্ঘ হয় ক্লাব কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হতে শুরু করে। পুজো আয়োজকরা জানাচ্ছেন, গতবছর অনেক খুঁজেও বড় মাপের তাজা বোয়াল মেলেনি। নিরুপায় হয়ে মাঝারি মাপের মাছ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছিল।