বাবুল হক, মালদহ: লক্ষ্মী পেঁচা সবার চেনা। কিন্তু ঘাস পেঁচা? তা-ও আবার অস্ট্রেলীয় ঘাস পেঁচা। কেউই হয়তো নাম শোনেননি। পাখিপ্রেমী ছাড়া এই ঘাস পেঁচার নাম ক’জনই বা শুনেছেন কে জানে! আসলে এরাজ্যে অস্ট্রেলীয় ঘাস পেঁচা সাধারণত দেখা যায় না। পশ্চিমবঙ্গে শেষবার দেখা গিয়েছিল অন্তত ৪০ বছর আগে। ১৯৮০ সালে, শান্তিনিকেতনে। এমনটাই দাবি বন দপ্তরের।
সম্প্রতি মালদহ জেলা বন দপ্তরের পক্ষ থেকে ফরাক্কা ও মানিকচকের গঙ্গার চরে পাখি সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। সেই সময় বন দপ্তরের কর্মীদের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এই বিরল প্রজাতির পেঁচা। এনিয়ে দু’দিন ব্যাপী একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন মালদহ জেলা বনদপ্তর, জেলা প্রশাসন এবং এই বিষয়ক বেশ কয়েকটি সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ান ঘাস পেঁচার সঙ্গে লক্ষ্মীপেঁচার (বার্ন আউল) চেহারার অনেকটা মিল থাকলেও ঘাস পেঁচাদের পিঠের অংশ লক্ষ্মী পেঁচার মতো সোনালি-ধূসর নয়। সাদা পেটে রয়েছে সূক্ষ্ম বাদামি ছোপ। মুখের সাদা গোল চাকতিকে ঘিরে পাটকিলে গলাবন্ধও এদের শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
মালদহ বন বিভাগের কর্তাদের প্রশ্ন একটাই, উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে কীভাবে ঘাস পেঁচারা মালদহের গঙ্গার চরে চলে এল? তাঁদের অনুমান, সম্ভবত ওই তৃণভূমিতে আগে থেকেই তাদের বসত ছিল। পাখি প্রেমীরা জানান, বিলুপ্তপ্রায় ঘাসপেঁচা বা অস্ট্রেলিয়ান গ্রাস আউল অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া মহাদেশে সাধারণত দেখা যায়। ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বর্তমানে এই পেঁচা দেখা গেলেও পশ্চিমবঙ্গে তেমনভাবে খোঁজ মেলেনি। ১৯৮০ সালে শান্তিনিকেতনে শেষবার দেখা গিয়েছিল। এবার ২০২৫ সালের ৯ মার্চ এই পাখির দেখা মিলল মালদহের গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলে।
মালদহের জেলা বন দপ্তরের আধিকারিক (ডিএফও) জিজু জেসফার জি জানান, ১ মার্চ প্রথম এই ঘাস পেঁচার ছবি ধরা পড়ে। ১১ মার্চ পুনরায় সেই এলাকায় গিয়ে আরও দুটি ঘাস পেঁচার ছবি তুলতে সক্ষম হন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। এই প্রজাতির পেঁচা ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত এই ঘাস পেঁচা তৃণভূমি অঞ্চলে দেখা যায়। অন্যান্য প্রজাতির পেঁচা লোকালয়ে দেখা যায়। কিন্তু এই পেঁচা দেখা যায় ঘাস জমি এলাকাতেই। জেলা বন দপ্তরের আধিকারিক জিজ জেসফার জি জানান, মালদহের গঙ্গা তীরবর্তী কালিয়াচক-২ নম্বর ব্লকের পঞ্চানন্দপুর অঞ্চলের আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় এই পেঁচা দেখতে পাওয়া গিয়েছে। সেই উড়ন্ত পেঁচার ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছে। সেই ছবি পক্ষী বিশেষজ্ঞদের পাঠানো হচ্ছে। এই পাখির সুরক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।