- সুব্রতা ঘোষ রায়
সম্প্রতি আলিপুরদুয়ারের কিছু নার্সিংহোমে লাগামহীন সিজারের ঘটনা উত্তরবঙ্গ সংবাদে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ হয়েছে। পড়লাম, যেখানে জেলায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সিজারের অনুমতি মেলে, সেখানে আলিপুরদুয়ারে হচ্ছে ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ।
সরকারি হাসপাতাল নিয়মনির্দেশিকা মেনে চললেও নার্সিংহোমগুলো এসবের তোয়াক্কা করে না। প্রশাসনেরও নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ কম। এই সুযোগে কিছু নার্সিংহোম প্রাণপণ চেষ্টা চালায় উপার্জন বাড়াতে। তাদের উপার্জনের অধিকাংশই আসে সিজার বেবির কেসে। নার্সিংহোমগুলো অবশ্য এই দাবি মেনে নেয় না। তারা সিজারের জন্য আগেই বাড়ির লোকের সম্মতিপত্র নিয়ে রাখে।
শুধু সিজার নয়, শুধু আলিপুরদুয়ার নয়। সব শহরের কিছু নার্সিংহোমে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে নানা রহস্যময় ঘটনা। সোডিয়াম পটাসিয়ামের অনুপাতের কমবেশির জন্য ভর্তি হওয়া প্রবীণকে পরদিন দেখতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, তাঁর কপালে ঘন কালো দাগ। ফুলে আছে। অথচ এটা রাজ্যের অন্যতম বিখ্যাত নার্সিংহোম। কীভাবে হল, কেন হল, রাতের নার্স বা আয়া কেউ বলতে পারেন না!
আবার কোথাও বাড়ির মানুষটির সাময়িক হাত-পা জ্বলার সমস্যায় স্ত্রী কাছাকাছি নামী নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে তৎপরতায় নেওয়া হয় আইসিইউতে। এবার একজন অমায়িক ইউরোলজিস্ট, যিনি একাধারে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত, বাড়ির লোককে বলেন, রোগীর সিস্টোস্কপি করে নিলে ভালো। যে মেশিন ডাক্তারের সঙ্গেই আছে। আনাড়ি পরিবার সম্মতি দেয়। ডাক্তারবাবু তখন বলেন, ‘এই বিল নার্সিংহোমের সঙ্গে করবেন না। এটা আমাকে আলাদা দেবেন।’
পরে জানা যায়, তা খুব ব্যথাদায়ক পরীক্ষা, যার রেশ বেশ কিছুদিন থাকে। শেষমেশ রোগ শনাক্ত হয়- ভিটামিন বি-১২’এর স্বল্পতা। বাড়ির লোককে বোকা বানিয়ে এথিকসের তোয়াক্কা না করে পরিবারের মানসিক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে চলে নানা ফন্দিফিকির!
হাওড়ার ঘটনা। সদ্যোজাত সন্তানকে রাতে কিছুক্ষণের জন্য নার্স কোথাও নিয়ে যান। তারপর দিয়ে যান মায়ের কাছে। শিশুটি কাঁদতে থাকে। মাকে বলা হয়, ব্রেস্টফিড করান। এবার শিশুটির নাকমুখ থেকে রক্ত বেরোতে থাকে। নার্সিংহোমে চিকিৎসা চলে, কিন্তু শিশুটি বাঁচে না!
বর্ধমানের ঘটনা। শ্বাসকষ্টজনিত অসুবিধেয় নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অক্সিজেন দিয়ে মোটামুটি ঠিক। নার্সিংহোমের তরফে বলা হয়, একটা রাত থাক, কাল ছুটি। রাত দুটোয় বাড়িতে ফোন আসে। ইমার্জেন্সি, শিগগির আসুন, ভেন্টিলেশনে দিতে হবে, সই করে যান। ভেন্টিলেশনে যাওয়ার আগে রোগী বলেন, ‘ওরা আমার সঙ্গে কী করেছে, আমি পরে বলব। আমি এত অসুস্থ ছিলাম না।’
ক’দিন ভেন্টিলেশনে থেকে তিনি চিরতরে চলে যান। পরিবার পরে জানতে পারে, এরকম মধ্যরাতে ফোনের ঘটনা এই নার্সিংহোমে মাঝে মাঝেই হয়। মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওঠা এমন রোগীকে কিছু ইনজেকশন দিয়ে অবস্থা খারাপ করে দেওয়া হয়। শুধু ভেন্টিলেশন বা আইসিইউতে নিতে। ডাক্তাররা করেন না, করে নার্সিংহোমের রাতের কিছু ট্রেনিং প্রাপ্ত মানুষ। এদের কিছু বলতে গেলে ভবিষ্যতে নানা অশান্তির মুখোমুখি হতে হবে। এই বিষয়টি প্রশাসন ভাবুক তাঁদের মস্তিষ্ক, মনন ও অনুভব দিয়ে। দরকারে এই বিষয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি টাস্ক ফোর্স হোক। যাতে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য চিকিৎসার মতো মহান পরিষেবা কালিমালিপ্ত না হয়।
(লেখক শিলিগুড়ির ভূমিকন্যা। সাহিত্যিক)
The submit স্বাস্থ্য নিয়ে খেলা কবে বন্ধ হবে appeared first on Uttarbanga Sambad.