সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান। অবশেষে বিরাট রাজার হাতে উঠল আইপিএল ট্রফি। চ্যাম্পিয়নের খেতাব পেল সাবালক আরসিবি। আহমেদাবাদের মেগা ফাইনালে পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো আইপিএল জয়ের স্বাদ পেল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। গোটা মরশুমের মতো ফাইনালেও দুর্দান্ত টিম গেম, এবং লড়াকু মানসিকতার পরিচয় দিয়ে বিরাটরা বুঝিয়ে দিলেন, এই দলটা বদলে গিয়েছে। ঠিক কোন ম্যাজিকে ফাইনালে পাঞ্জাব বধ?
১। টিম গেম: আরসিবি মানেই একটা সময় ছিল তারকাদের মেলা। সেরা ফর্মের ক্রিস গেইল, এবি ডি’ভিলিয়ার্স, জ্যাক কালিস, বিরাট কোহলি-কে খেলেননি আরসিবি জার্সিতে? সমসাময়িক ক্রিকেটদুনিয়ার সেরা তারকাদের দলে নিতে কখনই ভুল করেনি আরসিবি ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু চলতি বছর ছিল ব্যতিক্রম। নিলামের সময়ে একঝাঁক ক্রিকেটারকে কিনলেও, তথাকথিত তারকা ছিল না আরসিবি শিবিরে। টিম ডেভিড, রোমারিও শেফার্ড, লিয়াম লিভিংস্টোন, ক্রুণাল পাণ্ডিয়া, জশ হ্যাজেলউড, লুঙ্গি এনগিডি, জিতেশ শর্মা-স্টারডমের নিরিখে এঁরা নেহাতই মধ্যমানের তারকা। যার ফলে আরসিবি টিম হিসাবে উঠে আসতে পেরেছিল। ফাইনালেও সেই টিম গেমই দেখা গেল। ১৯০ রান যে তুললেন বিরাটরা, সেটা কোনও একজনের অভাবনীয় ইনিংসে নয়। বিরাট সর্বোচ্চ ৪৩ করলেন বটে, বাকিদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান পাতিদারের ২৬। যারা যারা ব্যাট করার সুযোগ পেলেন, প্রত্যেকেই কমবেশি অবদান রাখলেন। আবার বোলিং বিভাগেও সবে মিলে করি কাজেই ভরসা রাখলেন পাণ্ডিয়া, হ্যাজেলউডরা।
২। বড় ম্যাচের চাপ সামলানো: তারকা খচিত দল না হলেও আরসিবি দলের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে আইপিএলে খেলছেন। এবং বড় ম্যাচে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা যেন সবটা উজার করে দিলেন বিরাট কোহলি, ক্রুণাল পাণ্ডিয়া, ভুবনেশ্বর কুমার, যশ হ্যাজেলউডরা। সেই সঙ্গে উদীয়মান তরুণরাও ফাইনালের চাপটা ভালোমতো সামলে দিলেন। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সব মোড়ে স্নায়ুর চাপ সামলানোটা ফাইনালে আরসিবির জয়ের বড় কারণ।
৩। ক্রুণাল পাণ্ডিয়া: হার্দিক পাণ্ডিয়ার সাফল্যের ছটায় অনেক সময় উপেক্ষিত থেকে যান ক্রুণাল। কিন্তু এ মরশুমে আরসিবির হয়ে সব থেকে ধারাবাহিক তারকাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। মঙ্গলবারের ফাইনালেও ম্যাচের মোড় ঘোরানোর কৃতিত্বের সিংভাগ তাঁর। ব্যাট হাতে বিশেষ কিছু করতে না পারলেও বল হাতে জীবনের অন্যতম সেরা স্পেলটা করে গেলেন। ৪ ওভার বল করে ২ উইকেট। তাও মাত্র ১৭ রান দিয়ে। ক্রুণাল যে চাপটা তৈরি করলেন সেটা আর সামলাতে পারেনি পাঞ্জাব।
৪। তরুণ পাঞ্জাবের ব্যর্থতা: চলতি মরশুমের শুরু থেকেই অন্যরকম দেখিয়েছে শ্রেয়স আইয়ারের পাঞ্জাব কিংসকে। তবে চাপের মুখে এই দল যে ভেঙে পড়তে পারে সেটা বোঝা গিয়েছিল প্রথম কোয়ালিফায়ারেই। ফাইনালেও প্রবল চাপে খানিকটা চুপসে গেল পাঞ্জাব কিংস। ব্যর্থ হলেন শ্রেয়স নিজেও। ঠিক যখন তাঁর দরকার সবচেয়ে বেশি ছিল দলের। আসলে তারুণ্যে ভরপুর পাঞ্জাব দলে অভিজ্ঞতার অভাবটা ভোগাল পাঞ্জাবকে। রান তাড়া করতে গিয়ে স্নায়ুর চাপ সামলাতে পারলেন না তাঁরা।
৫। পাতিদারের অধিনায়কত্ব: রজত পাতিদার। তাঁর কথা আলাদা করে না বললেই নয়। মরশুমের শুরুর দিকে যখন পাতিদারকে অধিনায়ক হিসাবে ঘোষণা করা হল, তখন অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছিলেন। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করেছেন রজত। গোটা মরশুম দলকে দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ফাইনালেও ব্যতিক্রম নয়। ১৯১ রান পুঁজি করে যেভাবে তিনি নিজের বোলারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করলেন, শুরুর দিকে প্রভসিমরন, ইংলিশরা যখন বেধড়ক পেটাচ্ছিলেন, তখনও কিন্তু মরিয়া হয়ে ভুল কোনও পদক্ষেপ করেননি তিনি। নিখুঁত অধিনায়কত্ব করলেন তিনি। কোথাও প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। সেটাও আরসিবির ফাইনাল জেতার, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম কারণ।