সাতপাকের সাক্ষী ওয়ালিমার মঞ্চ

সাতপাকের সাক্ষী ওয়ালিমার মঞ্চ

ব্লগ/BLOG
Spread the love


পুনে: আমি চাই, ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু… কবির সুমনের গানটি বোধহয় পুনের কাজি, কাওয়াডে বা গালান্দে পরিবার শোনেনি কখনও। কিন্তু মনেপ্রাণে তারাও বিশ্বাসী মানবধর্মে। একটি মঞ্চে বিয়ের সাজে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে চারজন। মুখে চওড়া হাসি। প্রকৃতি যেন একসূত্রে বেঁধে দিল দুই ধর্মকে।

কীভাবে? গত মঙ্গলবারের ঘটনা। ওয়ানাওয়াডিতে খোলা আকাশের নীচে বসেছিল সংস্ক্রুতী কাওয়াডে ও নরেন্দ্র গালান্দের বিয়ের আসর। আমন্ত্রিতদের ভিড়ে ঠাসা চারদিক। সাতপাকে বাঁধা পড়ার আগেই গর্জে উঠল মেঘ। মুষলধারে বৃষ্টি নামল আকাশের গা বেয়ে। মুহূর্তে নষ্ট হয়ে গেল জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। হইহই পড়ে গিয়েছিল চারদিকে। যে যেদিকে পারলেন ছুটলেন মাথা বাঁচাতে। বিশেষ দিনটি বৃষ্টির জলে মাটির মতো ধুয়ে যাওয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন সংস্ক্রুতী আর নরেন্দ্র। চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। মুখে কথা নেই কারও। কত স্বপ্ন দেখেছিলেন এই দিনের জন্য। দুই পরিবার চিন্তিত, লগ্ন পেরিয়ে গেলে তো মহামুশকিল।

ঠিক পাশেই একটি হলঘরে তখন ‘ওয়ালিমা’ (ইসলাম ধর্মাম্বলম্বীদের ‘নিকাহ’ পরবর্তী অনুষ্ঠান) চলছে। ঘরভর্তি অতিথি-অভ্যাগতরা। মঞ্চে মাহীন আর মহসীন কাজি। মনে কিছুটা সংকোচ নিয়েই সাহায্য চাইতে নরেন্দ্রর পরিজনরা গেলেন কাজি পরিবারের কাছে। যদি হলঘরের মঞ্চটি একবার ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। সন্ধে ৬টা ৫৬ মিনিটের মধ্যে যে সাতপাকে বাঁধা পড়তে হবে সংস্ক্রুতী-নরেন্দ্রকে।

রাজি হতে একবারের জন্যও ভাবেননি ওঁরা। কাজিদের মাথায় আসেনি ওয়াকফ সংশোধনী বিতর্ক বা ৩৭০ ধারা উচ্ছেদ। কাওয়াডে-গালান্দেদের ভাবনায় ছিল না পহলগাম কাণ্ড। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েই তো গাওয়া হয় মানবতার জয়গান। এক বৃন্তে দুটি কুসুম একসঙ্গে মিলেমিশে থাকে যেমন।

শুধুমাত্র মঞ্চ ছেড়ে দেওয়া নয়, ওই পরিবারের আমন্ত্রিতরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রস্তুতিতে। উদ্দেশ্য একটাই, যেন সমস্ত নিয়ম মেনে পালিত হয় আচার। অগ্নিকে সাক্ষী রেখে হিন্দু দম্পতিকে সাতপাকে ঘুরতে দেখছিলেন মাহীন-মহসীন। এক ছাদের নীচে দুই বিশ্বাস মিলেমিশে একাকার হতে হয়তো দেখছিল অদৃষ্ট।

সংস্ক্রুতীর এক আত্মীয় শান্তারাম কাওয়াডে বললেন, ‘ওই মুসলিম পরিবার আমাদের বিপদের দিনে যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে, তা আজীবন মনে রাখব। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান না থাকলে এটা সম্ভব ছিল না।’
বিয়ের পর অনুষ্ঠান যেন উৎসবে পরিণত হয়েছিল। চার পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে ফোটো তুললেন, খাওয়াদাওয়া সারলেন, হাসলেন প্রাণভরে। দুই নবদম্পতির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তোলা ভাইরাল ছবি যেন কোনও বার্তা দিতে চাইছে। চুপ করিয়ে দিচ্ছে একে অপরের প্রতি বিষোদগার করা মৌলবাদিদের। শব্দের থেকেও শক্তিশালী সেই মুহূর্ত।

মহসীনের বাবা ফারুখ কাজি একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক। তাঁর কথায়, ‘সংস্ক্রুতী আমার মেয়ের মতোই। যেন মনে হচ্ছিল নিজের কন্যার বিয়ে হচ্ছে মঞ্চে।’ সংস্ক্রুতীর বাবা চেতনের গলাতেও সম্প্রীতির সুর, ‘এটাই আমার দেশ। আমার ভারতবর্ষ। দুই ধর্মের দুই পরিবার একসঙ্গে আনন্দে মেতে উঠতে পারে যেখানে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *