ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেল সম্প্রসারণ থেকে সংস্কারে একের পর এক পরিকল্পনা করেছেন। ভবিষ্যতের ভাবনা সামনে রেখে রেল থেকে মেট্রো রেলের বিপুল বিস্তার হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়। স্থানীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে সেই আদলে রেল স্টেশন– এ ভাবনা তারই। যার সব থেকে বড় উদাহরণ দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে সেখানকার রেল স্টেশন। অথচ পরবর্তীকালে তাঁর করে যাওয়া পরিকল্পনা রূপায়ণ না করে উন্নয়নের গতি থামিয়ে এখন অমৃত ভারত প্রকল্পে রেল স্টেশন সৌন্দার্যায়নের কথা বলছে বিজেপি সরকার। কৃতিত্ব নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যে প্রকল্পের বেশ ক’টি রয়েছে বাংলাতেও। তা নিয়েই এবার বিজেপিকে তুলোধোনা করল রাজ্যের শাসক দল। বিজেপি সরকারের এই কৃতিত্ব দাবি যে সম্পূর্ণ রাজনীতির কারণে, আর তা যে সর্বৈব মিথ্যাচার সে কথা উল্লেখ করে বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষে বিঁধল তৃণমূল কংগ্রেস।
শনিবার তৃণমূল ভবনে এ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে পরপর পরিসংখ্যান দিয়ে জবাব দেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। রেল স্টেশনের এলাকাভিত্তিক সৌন্দর্যায়ন নিয়ে বিজেপি লাগাতার মিথ্যাচার করে চলেছে বলে অভিযোগ কুণালের। যা দেখে বাংলার মানুষ এবং দেশের বহু মানুষও হাসছেন বলে দাবি করে কুণাল বলেন, “সম্প্রতি রেল স্টেশনগুলির সৌন্দর্যায়ন নিয়ে হইচই করছে বিজেপি। বিষয়টা এমন যেন বিজেপি আমলেই এসব শুরু হয়েছে। বিজেপি ডাহা মিথ্যাচার করছে। মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। বাস্তব হচ্ছে, বিজেপি এখন যা যা করার কথা বলছে সেসব অনেক আগেই রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিকল্পনা করে গিয়েছেন। মেট্রো রেলের সম্প্রসারণও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করেই।” পরিসংখ্যান দিয়ে কুণাল বলেন, “২০০৯ অথবা ২০১০-১১ সালের রেল বাজেট এবং তাঁর ভিশন ২০২০’র দিকে তাকালেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। দেশের স্টেশনগুলিকে সেই এলাকার ইতিহাস, ধর্মীয় সংস্কৃতি কিংবা স্থানীয় বিখ্যাত কিছুর আদলে তৈরি করার পরিকল্পনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দক্ষিণেশ্বর রেলের টিকিট কাউন্টার যা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে তৈরি সেটা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনাতেই তৈরি। এমনকী, মেট্রো স্টেশনগুলি মনীষীদের নামে চিহ্নিত করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই হয়েছিল।” পরে এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও সরব কুণাল লেখেন, ‘রেলস্টেশন সৌন্দর্যায়ণ নিয়ে মিথ্যাচার করছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী যা উদ্বোধনের কথা বলছেন, তার কৃতিত্ব তাঁর নয়, কাজটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।’
এখন আর আলাদা করে রেল বাজেট হয় না। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেল বাজেট থেকে একের পর এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করেছেন। যার আরেক দৃষ্টান্ত দিঘার জন্য রেল প্রকল্প। কুণালের কথায়, “দিঘার ট্রেন কার চালু করা? উত্তর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঐতিহ্য তৈরি করেছেন, সেই ঐতিহ্য এখনও বহন করে চলেছে রেলমন্ত্রক। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেগুলির বাস্তবায়নে এত দেরি হল কেন? উঠছে প্রশ্ন। আসল ঘটনা বাংলার মানুষ জানেন, দেশের মানুষও বোঝেন। তাঁরা এই মিথ্যাচারের জবাব যথাসময়ে দেবেন।”