সতর্কতা জরুরি

সতর্কতা জরুরি

ব্লগ/BLOG
Spread the love


হিংসার কবলে লাদাখ। ৬ বছর আগে জম্মু ও কাশ্মীর ভেঙে লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার পর মনে হয়েছিল, উন্নয়নের রথ ছুটবে। পর্যটনের বিকাশ হবে। আমজনতার রুজিরুটির সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে বহু যোজনের ফারাক রয়ে গিয়েছে। সেটা টের পেয়ে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা, ষষ্ঠ তফশিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ শুরু করেছেন লাদাখের বাসিন্দারা।

এতদিন প্রতিবাদের মাধ্যম ছিল অহিংসা এবং শান্তিপূর্ণ। নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন শিক্ষাবিদ তথা জলবায়ু আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুক। গান্ধিবাদী মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি বারবার অনশন করেছেন দাবি আদায়ে। কিন্তু শেষপর্যন্ত লাদাখে হিংসার আগুন জ্বলে ওঠায় স্পষ্ট, অহিংসা এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মানসিকতা ওয়াংচুকের থাকলেও তাঁর সমস্ত অনুগামীর নেই।

লাদাখের অগ্নিগর্ভ আন্দোলনে ঘুরেফিরে এসেছে জেন জেড প্রসঙ্গ। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপালের ধাঁচে লাদাখে আগুন লাগিয়ে, ভাঙচুর ইত্যাদির মধ্যে অহিংসার লেশমাত্র নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযোগ, এই হিংসায় ইন্ধন দিয়েছেন সোনমই। তাই তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর এনজিও-র বিদেশি অনুদান সংক্রান্ত ছাড়পত্র বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর সংস্থার টাকার উৎস জানতে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।

সোনম অবশ্য বারবার দাবি করছেন, হিংসায় তাঁর সমর্থন নেই। হিংসায় জড়িতদের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কও নেই। কিন্তু ওয়াংচুকের কথাকে বিশ্বাস করছে না কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের বরং অভিযোগ, লাদাখে যাবতীয় অশান্তির মূলে ওয়াংচুকই। ব্যতিক্রমী পথে শিক্ষালাভের ধারণা ভারতীয়দের মনে ঢুকিয়েছেন তিনি। তাঁকে সামনে রেখে বলিউড তৈরি করেছিল ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমায় আমির খান অভিনীত ‘র‌্যাঞ্চো’ চরিত্রটি।

সেই সময় জনপ্রিয়তার শিখরে উঠেছিলেন সোনম। সেই মানুষটিই লাদাখবাসীর সুস্থ জীবনযাপন, নাগরিক অধিকার এবং ন্যায়ের দাবিতে সরব হওয়ায়, বারবার অনশন করায় তাঁকে কারাগারে বন্দি করতে দ্বিধা করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। নিঃসন্দেহে হিংসা, ভাঙচুর, নৈরাজ্যের পথে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয় না। বরং বিনা রক্তপাতে দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসককে গদিচ্যুত করার উদাহরণ আছে শ্রীলঙ্কায়।

যদিও বাংলাদেশ এবং নেপালে রক্তপাত, হিংসা হয়েছিল। তবে নেপালে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসায় দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং জনজীবন স্বাভাবিক হয়েছে। বাংলাদেশে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। বরং পদ্মাপারে অশান্তি নিত্যদিনের সঙ্গী। অর্থাৎ জেন জেডের আন্দোলনের চাল-চরিত্রে মৌলিক কিছু পার্থক্য থাকছেই।

লাদাখের মতো অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যভরা শান্ত এলাকায় হিংসা ছড়ানোর তদন্ত অবশ্যই হওয়া উচিত। কারা আগুন নিয়ে খেলছে, কী তাদের উদ্দেশ্য ইত্যাদি রহস্যের যবনিকাপতন হওয়া উচিত। ভারত-চিন সংঘাতের অন্যতম কেন্দ্রস্থল হিসেবেও পরিচিত লাদাখ। গালওয়ান উপত্যকায় চিনা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে ভারতের ২০ জন জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন। লাল চিনের আগ্রাসনের কারণে লাদাখ সবসময়ই ভারতের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য দুশ্চিন্তার।

তাই পৃথক রাজ্য, ষষ্ঠ তফশিলের মতো দাবি ঘিরে সোনমের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ অনশন চলাকালীন হঠাৎ হিংসার আগুন জ্বলে ওঠার তদন্ত অবশ্যই হওয়া উচিত। হিংসা ও নৈরাজ্যের আগুন কারা জ্বালাল, কারা মদত দিল, তা খুঁজে বের করা দরকার। তবে যাবতীয় অশান্তির দায় সোনম এবং কংগ্রেসের ঘাড়ে ঠেলে চটজলদি সমাধানের কৌশল কেন্দ্র নিলে লাদাখের মূল সমস্যাগুলি থেকে নজর সরে যেতে পারে।

এর আগে বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দেশের অন্নদাতারা যখন দিল্লিতে নজিরবিহীন আন্দোলনে বসেছিলেন, তখন তাঁদের খালিস্তানি জঙ্গি তকমা দিয়ে দেশবাসীর চোখে খলনায়কে পরিণত করার চেষ্টা হয়েছিল। তাতে বাস্তব চিত্রটা বদলে যায়নি। লাদাখবাসীর দাবিদাওয়াগুলি তাই খোলা মনে বিবেচনা করা প্রয়োজন। কিন্তু হিংসার আগুন নেভানোর নামে নতুন করে অশান্তির বীজ বপন হয়ে গেলে তা যেমন লাদাখের পক্ষে বিড়ম্বনার, তেমনই বিপজ্জনক দেশের পক্ষে।

The publish সতর্কতা জরুরি appeared first on Uttarbanga Sambad.



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *