শিক্ষা সম্মেলনে ডানা মেলে প্রতিভারা

শিক্ষা সম্মেলনে ডানা মেলে প্রতিভারা

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


সুভাষ বর্মন

অরূপ দাস ২০১৬ সালে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। আমন্ত্রণ পেয়ে শিলবাড়িহাট হাইস্কুলে আয়োজিত প্রাক্তনীদের পুনর্মিলনে এসেছিলেন তিনি। সেখানেই শিক্ষকের শাসনের স্মৃতিচারণ করলেন। স্কুলে একদিন দুই বন্ধুর মধ্যে ঝগড়া লেগেছিল। সেই খবর পেয়ে দুজনকে ডাকেন তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ননীগোপাল রায়। দোষ থাকায় অরূপের হাতে বেতের বাড়ি পড়ে। দাগ পড়ে গিয়েছিল৷ সেটা দেখে আবার প্রধান শিক্ষক তাঁর হাতে মলম লাগিয়ে দেন। অরূপের কথায়, ‘সেদিন থেকে ওই সহপাঠী আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হয়ে উঠেছিলাম তারপর থেকে।’ তাঁর আক্ষেপ, ‘শিক্ষকরা এখন আর লাঠি নিয়ে ক্লাসে ঢোকেন না। অথচ এমন শাসনের কিন্তু বিরাট গুণ।’

১৯৮৬ সালের ব্যাচের অণিমা দাসের স্মৃতিতে আজও রঙিন ভূগোল স্যরের ক্লাস। শচীন তালুকদার নামে ওই শিক্ষক ম্যাপের দিকে না তাকিয়ে বহু জায়গা সম্পর্কে গড়গড় করে তথ্য বলে দিতেন। ভৌগোলিক অবস্থান যেন তাঁর কাছে জলভাত ছিল। অণিমার কথায়, ‘তখন স্কুলের পরিকাঠামো খুব বেশি ভালো ছিল না। কিন্তু স্যর, ম্যামরা পড়ানোয় খামতি রাখতেন না।’
আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের পলাশবাড়ির শিলবাড়িহাট হাইস্কুলে প্রতিবছর ২৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি- চারদিন ধরে বার্ষিক অনুষ্ঠান হয়৷ যার পোশাকি নাম, ‘শিক্ষা সম্মেলন’। এই সম্মেলনের মাধ্যমে পড়ুয়াদের সাংস্কৃতিক প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। এবছর প্রথম দিন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। তারপর হয় আন্তঃশ্রেণি ফুটবল ও দাবা প্রতিযোগিতা। সেদিনই পড়ুয়াদের তৈরি মডেলের প্রদর্শনীকক্ষের উদ্বোধন হয়েছিল। সপ্তম শ্রেণির দৈবিক ভুঁইয়া বনাঞ্চলে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার, অষ্টম শ্রেণির নিশান্ত পাল কলকারখানার নোংরা জল পরিষ্কার করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার, নবম শ্রেণির সমার্পণ দাস নিউরোনের বিভিন্ন অংশের সহজ চিহ্নিতকরণ নিয়ে মডেল তৈরি করেছিল। প্রধান শিক্ষক পীযূষকুমার রায়ের কথায়, ‘শিক্ষা সম্মেলন পড়ুয়াদের অনুপ্রাণিত করে। প্রতিযোগিতার মানসিকতা তৈরি হয়। সংস্কৃতি চেতনা গড়ে ওঠে। তবে এবার পুনর্মিলন অনুষ্ঠানে আমাদের বাড়তি পাওনা প্রাক্তনীদের স্মৃতিচারণা।’

দ্বিতীয় দিন হয়েছে বসে আঁকো, নাচ ও গানের বিভিন্ন বিভাগে প্রতিযোগিতা। সূচিতে ছিল তাৎক্ষণিক বক্তৃতার প্রতিযোগিতাও। সবক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শ্রেণির পড়ুয়াদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সেদিন ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তৃতীয় দিন অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারি স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবস। সেদিন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। তারপর মঞ্চে একে একে পরিবেশিত হয় নানা অনুষ্ঠান। তাৎক্ষণিক অভিনয়, মূকাভিনয়, কুইজ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। সেদিনই ছিল প্রাক্তনীদের পুনর্মিলন। স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ননীগোপাল রায় এসেছিলেন। ‘অভি’ নামে এক পত্রিকা প্রকাশ করেন অতিথিরা। সেখানে স্কুল পড়ুয়াদের নানা স্বাদের লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সন্ধ্যায় সবাই মিলে কেক কেটে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করে।

২৬ জানুয়ারি সকালে পালিত হয় প্রজাতন্ত্র দিবস। সম্মেলনের শেষ দিনে জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি মনোরঞ্জন দে উপস্থিত ছিলেন। সেদিনই পরিবেশিত হয় পড়ুয়াদের অভিনীত নাটক। ‘ফুল’ চরিত্রে অভিনয় করেছিল জয় বর্মন। ফুলের বাবা আর মায়ের ভূমিকায় ছিল জগন্নাথ বর্মন ও গোপেশ রায়। কুণাল বর্মন একজন স্কুল শিক্ষকের চরিত্রে পাঠ করে। দুই ছাত্রীর চরিত্রে তৃষাণ গোস্বামী ও শুভম রায়। ভূতের চরিত্রে ছিল দীপ বর্মন ও রাজদীপ বিশ্বাস। এই নাটকটি পরিচালনা করেন শিক্ষক উজ্জ্বল বর্মন। ‘স্কুলছুট ও বাল্যবিবাহ রুখতে একটি মেসেজ’ নামক নাটকটি পরিবেশন করে প্রশংসিত হয় খুদেরা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *