লোকে ভুলে গিয়েছে, আজ খুব কষ্টে সিপিএম

লোকে ভুলে গিয়েছে, আজ খুব কষ্টে সিপিএম

ব্লগ/BLOG
Spread the love


 

তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না। এ গভীর মনোবেদনার কথা। সবাই ভুলে মেরে দিয়েছে। সেই ভূমি সংস্কার, সেই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা, সেই আদিবাসী কল্যাণ, অপারেশন বর্গা, সব লোকে ভুলে গিয়েছে। সিপিএমের কথা বলছি। সিপিএমের নতুন সাধারণ সম্পাদক জানাচ্ছেন, মানুষ আমাদের ভুলেছে। কারণ আমরাই তাদের ভুলতে দিয়েছি। তিন রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার কী কী করেছিল, তা ভালো করে এতদিন বলা হয়নি। তাই লোকেরও আর মনে নেই। এজন্যই পার্টি দূরে সরে গিয়েছে। যে দরিদ্র শ্রমিক কৃষকদের জন্য এই পার্টি, তারাই আর সিপিএমের কথা বলে না, আক্ষেপ ঝরে পড়েছে তাঁর কথায়।

কথাটা উঠেছে সিপিএমের প্রসার নিয়ে। প্রসার দূরস্থান, দিনে দিনে ক্ষইতে ক্ষইতে এখন প্রায় একটা বিন্দু, কষ্ট করে খুঁজতে হয়। তিন রাজ্যের দখল এখন দক্ষিণের কেরলে গিয়ে ঠেকেছে। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা নাগালের বাইরে। সব গুরুত্ব হারিয়েছে তারা। এই অবস্থায় কী করণীয় তা ঠিক করতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসেছিল। সেখানে আরও পাঁচ রকম কথার মধ্যে উঠে এসেছে পার্টির সারা দেশে প্রসারের কথা। সাধারণ সম্পাদকের উপলব্ধি, পার্টি বাড়ানোর কোনও জাদুদণ্ড নেই। আমাদের জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে। তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে, একদা সিপিএম তাদের জন্য কত কী করেছে। আমরাই তাদের আসল কাছের লোক।

সিপিএমের কোনও সময়েই কর্মসূচির কোনও অভাব হয়নি। তা সে করার মতো লোকলস্কর না-ই থাকুক। এবারেও নানারকম কর্মসূচি হবে বলে জানিয়েছে তারা। তারই একটা হল, সারা দেশে সংগঠন বাড়ানো। আগামী এক মাসের মধ্যে জেলায় জেলায় দলের কথা প্রচার করতে সভা করা হবে। সেইসঙ্গে বলা হবে বাম রাজত্বে কী সুখে ছিল জনগণ। বোঝাতে হবে সিপিএম ছাড়া আর কেউ গরিবদের কথা ভাবে না, বলে না। দল বাড়াতে যেখানে যতটুকু পার্টি এখনও অবশিষ্ট আছে, সেখানে চেষ্টা করতে হবে। দেখতে হবে, আর যেন দল ক্ষয়ে না যায়।

কঠিন কাজ নিঃসন্দেহে। যখন সুদিন ছিল, সেই ১৯৭৮ সাল থেকেই এই দল বাড়ানোর কথা ভেবে এবং বলে আসছে সিপিএম। সেই বছর সালকিয়া প্লেনামে ঠিক হয়েছিল দলকে পাশের রাজ্যগুলোয় বাড়াতে হবে। সেসময় দলের উঠতি অবস্থা। লোকজন, ক্যাডার, কমরেড কোনও কিছুরই অভাব নেই। তবু শত চেষ্টাতেও বরাকর নদ পেরিয়ে বিহারে ঢুকতে পারেনি তারা। তার জন্য অবশ্য কসরত কম হয়নি। নেতাদের জন্য হিন্দি শেখার ক্লাস হয়েছিল। কিন্তু কোথায় কী! গোবলয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে সমাজবাদী আর হিন্দুবাদীরা। নকশালরা তবু খানিকটা জায়গা করে নিলেও মোটেই কলকে পায়নি জ্যোতিবাবুর দল।

২০১৬ সালে সিপিএমের প্লেনামে ঠিক হয়েছিল, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র আর উত্তরপ্রদেশে দল বাড়ানোয় বেশি জোর দেওয়া হবে। সে জন্য ক্যাডার আর কেন্দ্রীয় নেতাদের বাছাই করার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু দলের রিপোর্ট বলছে, গত তেরো বছরে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হিন্দি বলয়ে মণ্ডল-কমণ্ডলের তীব্র হাওয়ায় সিপিএম স্রেফ উড়ে গিয়েছে। উত্তর ভারতে তাদের সাইনবোর্ডটুকুও নেই। এখন রাজ্যপাট যাওয়ার পর তথৈবচ এ রাজ্যের হালও। জেলা পরিষদ, বিধানসভা, লোকসভায় তারা নেই। গোটা রাজ্যে লাল ঝান্ডার জায়গা নিয়েছে গেরুয়া ঝান্ডা।

এখানে হাল ফেরাতে আগেকার ক্যাডার কমরেডদের উপর আর ভরসা না করে রীতিমতো দলের মুখপত্রে, ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে মাইনে করা পেশাদার লোকজন চেয়েছে সিপিএম। তাদের কাজ হবে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করা, দলের জন্য লেখালেখি করা, ডিজিটাল মার্কেটিং করা। পুরোদস্তুর কর্পোরেট। দলের মনে হয়েছে, আদ্যিকালের বুলি কপচে কমবয়সিদের আর টানা যাচ্ছে না। তাই ঝকঝকে চেহারায় তাদের সামনে আসতে হবে। সেখানে ভূমি সংস্কার, অপারেশন বর্গার পুরোনো গল্প লোকেদের মনে করিয়ে দেওয়ার সুযোগ কতটা থাকবে কে জানে!



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *