সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রুশ তেল অজুহাত মাত্র। ভারতের উপর ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্কের নেপথ্যে রয়েছে ভিন্ন কারণ! সম্প্রতি এমনই বিস্ফোরক রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনল আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক এবং ফিনান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি জেফরিজ। তাদের দাবি, ব্যক্তিগত রাগের বশবর্তী হয়েই ভারতের উপর অস্বাভাবিক শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
জেফরিজ সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত তিনটি কারণে ভারতের উপর অতিরিক্ত হারে শুল্ক চাপিয়েছে ট্রাম্পের আমেরিকা। যার প্রথম কারণ, সংঘর্ষ বিরতির কৃতিত্ব। পহেলগাঁও হামলার পর অপারেশন সিঁদুর এবং ভারত-পাক যুদ্ধবিরতি সম্পন্ন হয় পাক অনুরোধে। সেই কৃতিত্ব নিজে নেওয়ার লাগাতার চেষ্টা করে গিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের সে দাবি প্রতিবারই খারিজ করেছে ভারত সরকার। পাকিস্তান মুখ বুজে থাকলেও ভারত বারবার তাঁর দাবি খারিজ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ট্রাম্প। যার জেরেই ভারতের উপর এই অতিরিক্ত শুল্ক চাপানো হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে সংস্থার তরফে।
জেফরিজের রিপোর্টে দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উঠে আসে ভারতের কৃষি ক্ষেত্র। ট্রাম্প চেয়েছিলেন ভারত তার কৃষিজ পণ্যের বাজার আমেরিকার জন্য খুলে দিক। তবে ট্রাম্পের সে আর্জি স্পষ্টভাষায় খারিজ করে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের কোটি কোটি মানুষ এই ক্ষেত্রের উপর জীবিকা নির্ধারণ করেন। দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মী এই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। ফলে ভারত সরকার কৃষক স্বার্থের বিরুদ্ধে যে কোনও পদক্ষেপ নেবে না সে কথা বারবার একাধিক জনসভা থেকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
এই দুটি কারণ ছাড়াও তৃতীয় কারণ হল, নিজের ব্যর্থতার দায় অন্যের উপর চাপানোর সুযোগ পেয়েছেন ট্রাম্প। জেফরিজের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় আসার আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন ক্ষমতায় আসার এক সপ্তাহের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাবেন তিনি। তবে বাস্তবে তেমন কিছুই হয়নি। বারবার চেষ্টা করলেও কোনও ফল হয়নি। নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই ভারতের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন ট্রাম্প। এক চরম মিথ্যাকে দেশবাসীর সামনে সত্য হিসেবে তুলে ধরতে এবং নিজের মান রাখতে চাপানো হয়েছে এই শুল্ক।
উল্লেখ্য, প্রথমে শুল্কচুক্তি না হওয়ার জন্য ২৫ শতাংশ ও পরে রাশিয়ার তেল কেনার অভিযোগে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছে ভারতের উপর। সবমিলিয়ে মোট মার্কিন শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। আমেরিকা দাবি করেছে রাশিয়ার থেকে জ্বালানি তেল কেনার জেরে ভারতের উপর এই শুল্ক চাপিয়েছে। তবে ভারতের তরফে পালটা জানানো হয়েছে, রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় গ্রাহক চিন। প্রাকৃতিক গ্যাসের সবচেয়ে বড় গ্রাহক ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আমেরিকা নিজেও বিপুল পণ্য কেনে রাশিয়ার থেকে। ভারতের কেনা জ্বালানি তেল নিজের দেশের চাহিদা পূরণ করতেই কেনা হয়। সেখানে আমেরিকার অভিযোগ ভিত্তিহীন।