সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মোদির মুখে খুদিরাম! আগামী ১১ আগস্ট ক্ষুদিরাম বসুর মৃত্যুবার্ষিকী। তার আগে রবিবার মাসিক ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বাংলার অগ্নিযুগের অন্যতম বিপ্লবীকে স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিন নিজের ভাষণে স্বাধীনতা আন্দোলনে আগস্ট মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি তুলে ধরেন তিনি। তখনই ক্ষুদিরাম বসুকে দেশপ্রেমের অন্যতম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আগামী বছরে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্যসফরে ‘জয় শ্রী রামে’র পরিবর্তে মোদির মুখে শোনা গিয়েছিল ‘জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা’। অন্যদিকে উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের নির্যাতন ও পুশব্যাক নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। যার প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূল। এমন এক জটিল রাজনৈতিক আবহাওয়ায় হঠাৎই বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম বসুর প্রতি শ্রদ্ধাবান প্রধানমন্ত্রী। মোদির কথায়, “আপনারা কল্পনা করুন… ভোরবেলা, বিহারের মুজফ্ফরপুর শহর। তারিখ ১১ অগস্ট, ১৯০৮। সব গলি, সব মোড়, সব গতিবিধি তখন যেন থমকে গিয়েছিল। সাধারণ মানুষের চোখে জল কিন্তু মনে আগুন ছিল। তাঁরা একটা জেল ঘিরে রেখেছিলেন, যেখানে একজন ১৮ বছরের যুবক ইংরেজের বিরুদ্ধে নিজের দেশপ্রেম ব্যক্ত করায় মূল্য চোকাচ্ছিলেন। জেলের ভিতরে ইংরেজ আধিকারিক সেই যুবককে ফাঁসি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।”
গাড়িতে ব্রিটিশ বিচারক কিংসফোর্ড আছেন ভেবে বোমা ছুঁড়েছিলেন ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকি। যদিও কিংসফোর্ড ছিলেন অন্য গাড়িতে। বোমার আঘাতে মৃত্যু হয়েছিল মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যার। এই ঘটনার পর গ্রেপ্তারের আগেই আত্মহত্যা করেন প্রফুল্ল চাকি। ক্ষুদিরামের ফাঁসির সাজা হয়। সেকথা স্মরণ করে মোদি বলেন, “তাঁর (ক্ষুদিরামের) মুখে কোনও ভয়ের ছাপ ছিল না, বরং গর্বে পরিপূর্ণ ছিল। যে গর্ব দেশের জন্য প্রাণ দেয় যারা, তাঁদের থাকে। সেই বীর, সেই সাহসী যুবক ছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। মাত্র ১৮ বছরের বয়সে তিনি সেই সাহস দেখিয়েছিলেন, যা পুরো দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।”
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহাত্ম্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীর আত্মবলিদান সম্পর্কে এভাবেই সবিস্তার বলেন মোদি। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো সর্বভারতীয় স্তরের নেতার বাইরে ক্ষুদিরাম বসুই প্রথম বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী। যাকে নিয়ে নিজের ভাষণে বিশদে বললেন প্রধানমন্ত্রী। হঠাৎ মোদির এই বাঙালি প্রীতি কেন?
তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, “প্রথমত, ওটা মোদিজির মন কি বাত নয়। কারণ মোদিজির মনের কথা আমরা জানতে পারি না। মোদিজি তো অন্য কারও লিখে দেওয়া ভাষণ টেলিপ্রম্পটার দেখে পড়েন। তাই ওটা আসলে তাঁর হোমওয়ার্কের প্রতিফলন, যিনি ওই ভাষণ লিখে দিয়েছেন।” কুণাল আরও বলেন, “গোটা দেশে বাংলা এবং বাঙালির উপরে অত্যাচার করতে গিয়ে বিজেপি ফেঁসে গিয়েছে। তাই এখন এই সব ভাষণ লিখে সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।” যদিও রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে অযথা রাজনীতি খুঁজছে তৃণমূল।