বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য: দুর্যোগ যেন কিছুতেই সিকিমের পিছু ছাড়ছে না। পশ্চিম সিকিমে মর্মান্তিক ঘটনা। সেখানে ঘুরতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল কলকাতার এক মহিলার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ ডেন্টামের কাছে হাই-ওয়াটার গার্ডেন কমপ্লেক্সে ঘটনাটি ঘটেছে। জানা গিয়েছে, মৃত পর্যটকের নাম শ্রাবন্তী দত্ত রায়। তিনি এবং তাঁর স্বামী সুশীল রায় পশ্চিম সিকিমে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ওয়াটার গার্ডেন কমপ্লেক্সে আচমকা শ্রাবন্তীদেবী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তাঁকে ডেন্টাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা বলে মৃত ঘোষণা করেন।
সিকিমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলছেই। বৃহস্পতিবার রাতে ফের ভূমিধসে বিধ্বস্ত হয়েছে উত্তর সিকিমের চুংথাং ব্লকের পেগং। ওই রাতের ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে লাচেনের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তার অবশিষ্ট অংশগুলোও সম্পূর্ণ ভেসে গিয়েছে। ওই সমস্ত ঘটনার জেরে আতঙ্কে সিকিমের বাকি অংশে পর্যটকদের ভিড়ে যাতে ভাটার টান না হয়, সেজন্য সিকিম প্রশাসনের তরফে মরিয়া চেষ্টা শুরু হয়েছে। শুক্রবার সিকিম রাজ্য পর্যটন ও অসামরিক বিমান পরিবহণ বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব সিএস রাও জানান, চুংথাং সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কিন্তু সেটা রাজ্যের সামগ্রিক পর্যটন শিল্পকে প্রভাবিত করেনি। বছরে ২৫ লক্ষ পর্যটক আগমনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক আছে। যে পর্যটকরা এসেছেন, তাঁরা স্বেচ্ছায় উত্তর সিকিম থেকে অন্যদিকে ভ্রমণ পরিকল্পনা করছেন।
মে মাসের শেষ থেকে অতি ভারী বর্ষণের জেরে ভূমিধসে শুধুমাত্র উত্তর সিকিমেই নিখোঁজ হয়েছেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে ৬ জন সেনা জওয়ান এবং ৮ জন পর্যটক রয়েছেন বলে খবর। উত্তর সিকিমের মঙ্গন জেলার পুলিশ সুপার সোনম দেচু ভুটিয়া জানান, সামরিক ছাউনিতে ভূমিধসের পর নিখোঁজ ৬ সেনা জওয়ানকে খুঁজে বের করার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ঘটনার পর যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাঁরা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকতে পারেন বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথবা নদী ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। তাই তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নিখোঁজ পর্যটকদের নিয়েও আশার আলো দেখছে না উত্তর সিকিম পুলিশ। কারণ পাহাড়ের উঁচু এলাকায় ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ওই কারণে তিস্তা ফুলেফেঁপে রয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে বিচ্ছিন্ন উত্তর সিকিমের তারাম চু এলাকা বিধ্বস্ত হয়েছে। লাচেনের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তাগুলোর যতটা টিকে ছিল, সেসব সম্পূর্ণ ভেসে গিয়েছে।

পর্যটন ও অসামরিক বিমান পরিবহণ বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব সিএস রাও জানান, সিকিমে ২০০টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা ৯৩টি বিশিষ্ট স্থান রয়েছে। নাথুলা খোলা, পাস ইস্যু করা হচ্ছে। পর্যটন ও বেসামরিক বিমান পরিবহন বিভাগের সচিব হোন্ডালা গ্যাল্টসেন জানান, পর্যটকরা ইতিমধ্যেই তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে শুরু করেছেন। অন্য গন্তব্য বেছে নিচ্ছেন। সিকিমের ট্রেকিং রুটগুলিতে পর্যটকদের ভিড় রয়েছে। এদিকে, মৌসুমী অক্ষরেখা দুর্বল হাওয়ায় উত্তরে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা কমছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন