ভাবের ঘরে চুরি

ভাবের ঘরে চুরি

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


লাথি হজম করতে হয়েছে শিক্ষকদের। কিন্তু অন্তত যোগ্যদের চাকরি ফিরে পাওয়া নিশ্চিত হয়নি। শুধু আশ্বাসে চিঁড়ে ভেজে না। গোড়ায় যে গলদ। যে কারণে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে ধোঁয়াশার শেষ নেই। যোগ্যদের তালিকা শিক্ষা দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি স্কুল সার্ভিস কমিশনের। অথচ আদালতে যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করে দিতে কমিশন ব্যর্থ হয়েছিল। কাঁকর আলাদা করা যায়নি বলেই তো আদালত বস্তা ধরে চাল ফেলে দিল।

তাহলে যোগ্যদের এই তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায়! যে তালিকার ওপর ভিত্তি করে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করেছে আদালত, তার সঙ্গে এই তালিকার কী ফারাক? পার্থক্য যদি না থাকে, তবে সেই তালিকা ধরে চাকরি ফেরানো তো সম্ভবই নয়। আইনি বাধা না থাকলে ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ প্রকাশ করার আশ্বাস দিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী। যে ইমেজ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল বলে আদালতে জানিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন।

তাহলে এখন কমিশন সেই ইমেজ কোথা থেকে পাচ্ছে? যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, যে ইমেজ সিবিআই উদ্ধার করেছিল, সেটাই প্রকাশ করা হবে। আদালত কিন্তু সিবিআইয়ের পেশ করা মিরর ইমেজের ভিত্তিতে যোগ্য-অযোগ্যের ফারাক করতে পারেনি। স্কুল সার্ভিস কমিশন বা শিক্ষা দপ্তর ফের সেই ইমেজকে সামনে আনলে সুপ্রিম কোর্ট কেন তাতে মান্যতা দিতে যাবে? প্রশ্ন ও ধোঁয়াশা অনেক। কিন্তু সেসবের স্পষ্ট উত্তর বা ব্যাখ্যা নেই।

সন্দেহ ওঠা তাই স্বাভাবিক, সরকারের কি সত্যিই কিছু করার আছে? যদি না থাকে, তবে শুধু স্তোকবাক্যে ভোলানো হচ্ছে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের? রাগে, ক্ষোভে আন্দোলন করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। লাথি মেরে সেই আন্দোলন দমনের চেষ্টা হয়েছে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার স্বীকার করেছেন, ভুল হয়েছে। কিন্তু এ তো শুধু ভুল নয়, অন্যায়। আইনে অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার বিধান আছে।

শিক্ষকদের লাথি মারার অন্যায়ের বিচার তো হল না। বলা হল, পুলিশি তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু সেই তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে কি না, হলে সেই তদন্তে কী পাওয়া গেল, কাকে দোষী মনে করা হচ্ছে ইত্যাদি সবকিছুই ধোঁয়াশার আস্তরণে ঢাকা। ফলে পদাঘাতের বিচার শিক্ষকরা পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই গিয়েছে। লাথিতে অসম্মানিত তো হয়েছেন, এখন চাকরি নিয়েও ঘোর অনিশ্চয়তায় ওই শিক্ষকরা।

অথচ আশ্বাস ও পদক্ষেপের মধ্যে ফারাক ধরা পড়ে যাচ্ছে সাদা চোখে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে দু’বার দুই চাকরিপ্রার্থীর তথ্য জানার আইনের ভিত্তিতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নম্বর জানিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। বলা হচ্ছে, কমিশনের নিজস্ব ডেটা বেসে সেই তথ্য ছিল। তাহলে আদালতে কেন স্কুল সার্ভিস কমিশন দাবি করেছিল যে, ওএমআর শিট বা মিরর ইমেজ কোনওটিই তাদের হাতে নেই।

সেই দাবির জন্যই তো যোগ্য-অযোগ্যের ফারাক করতে না পেরে সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালে কমিশনের নিয়োগের পুরো তালিকাটাই বাতিল করে দিয়েছে। শিক্ষা দপ্তরে দু’দিন আগে কমিশনের পাঠানো তালিকাটা নিয়ে তাই সংশয় জাগে, এটাও কি চাকরিচ্যুতদের স্তোক দেওয়ার প্রয়াস? সুপ্রিম কোর্ট চাকরি বাতিল করলেও শিক্ষা দপ্তর যে কাউকে বরখাস্ত করল না, তাকে চাকরিচ্যুতদের কাছে ভালো থাকা যাবে।

তাতে কি কারও চাকরি রক্ষা হবে? মাইনেটা দিতে পারবে তো সরকার? আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠলে নতুন করে কি বিড়ম্বনা বাড়বে না চাকরিচ্যুতদের? কোনও আইনি সুযোগ যদি না থাকে, তাহলে শিক্ষকদের আশ্বাস শোনানোর পিছনে অসন্তোষ ঠেকানোর চেষ্টা ছাড়া আর কী থাকতে পারে! তাতেও কি শেষরক্ষা হবে? আইনে তেমন কোনও বিধান এখনও কেউ বলতে পারছে না। ফলে যা হচ্ছে, তা ভাবের ঘরে চুরি বলে মনে হচ্ছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *