বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে ফাটল! প্রেমিকাকে ‘খুন’ করতে অসম থেকে পুরুলিয়ায় যুবক

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে ফাটল! প্রেমিকাকে ‘খুন’ করতে অসম থেকে পুরুলিয়ায় যুবক

বৈশিষ্ট্যযুক্ত/FEATURED
Spread the love


অমিতলাল সিং দেও, মানবাজার: বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে পরিবারে অশান্তি। আর এই অশান্তি থেকে নিস্তার পেতে বাড়িতে ঢুকে মহিলার গলার নলি কেটে খুন। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের এই ঘটনায় তদন্তে নেমে বধূর প্রেমিককে গুজরাট থেকে গ্রেপ্তার করল রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ধৃতের নাম অর্জুন ঘোষ ওরফে বামপদ। তার বাড়ি মুর্শিদাবাদের সালার থানার তালিবপুর গ্রামে। তবে বর্তমানে ওই যুবক অসমে থাকে। বুধবার ধৃতকে রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। তার ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় বলেন,” ঘটনার পর অভিযুক্ত গুজরাটে পালিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারণে সংসারে অশান্তির জেরে প্রেমিকাকে খুন করতে অসম থেকে রঘুনাথপুরে এসেছিল বলে অভিযুক্ত জানিয়েছে।”

গত ১৮ মে রঘুনাথপুর পুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভন্দুর মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাড়ি থেকে বছর একত্রিশের মামণি দুবের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় ওইদিন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃতার ভাই রঘুনাথপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তারপর তদন্তে নামে রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির পঞ্চম্বাডামরা গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস দুবের সঙ্গে পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা থানার ধোবাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা মামনির প্রায় ১৪ বছর আগে প্রেম করে বিয়ে হয়। বর্তমানে তাঁদের একটি সন্তান রয়েছে। সে ওইদিন মামার বাড়িতে ছিল। দেবাশিস রঘুনাথপুরে একটি ইস্পাত কারখানায় কাজ করেন। ফলে স্ত্রীকে নিয়ে এক বছর ধরে রঘুনাথপুরে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। আর সেখানেই ভরসন্ধ্যায় ঘটে যায় এই খুন।

অন্যান্য দিনের মতো ১৮ মে সকালে কাজে বেরিয়ে যান দেবাশিস। বিকালে একাধিকবার স্ত্রীর ফোনে ফোন করেও যোগাযোগ না হওয়ায় তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর ওই যুবক দেখেন বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ পড়ে আছে। এই ঘটনায় পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে আড়াই বছর আগে দুর্গাপুরে সস্ত্রীক থাকতেন দেবাশিস। সেখানেই অর্জুন একটি ঘিয়ের দোকান চালাতেন। সেখানে বিবাহিত অর্জুন ও মামণির আলাপ হয়। পরে ওই দু’জনের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি অর্জুনের বাড়িতে জানাজানি হওয়ার পর চরম অশান্তি চলত। ফলে দোকান ছেড়ে অসমে কাজে চলে যায় ওই যুবক। তবে তাদের এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে কোনও ফাটল ধরেনি। অর্জুন পুলিশকে জানিয়েছে, মামণি তাঁর সাংসারিক দায়িত্ব ছিন্ন করতে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেছিল বলে অর্জুনের দাবি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। এরপরেই প্রেমিকাকে চিরতরে বিদায় করার ছক কষে অর্জুন।

পুলিশি তথ্য বলছে, গত ১৩ মে অসম থেকে রঘুনাথপুরে আসে অর্জুন। তারপর রঘুনাথপুর পুর শহরে একটি লজে ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করে। ১৭ মে প্রেমিকাকে জয়চণ্ডী পাহাড়ে দেখা করার অছিলায় ডাকে অর্জুন। সেখানেই তাকে খতম করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু লোকজন যাতায়াত করায় ওইদিন তার পরিকল্পনা সফল হয়নি। এরপর ১৮ মে স্বামী কাজে বেরিয়ে যাওয়ার পর মামণিকে ফোন করে তার ভাড়াবাড়িতে পৌঁছয় অর্জুন। সেখানে দু’জনের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। প্রথমে মামণির গালে চড় মারে অর্জুন। ওইসময় মামণি বিছানায় পড়ে গেলে গামছা দিয়ে তার গলা টিপে শ্বাসরোধ করা হয়। এরপর ধারালো ক্ষুর দিয়ে প্রেমিকার নলি কেটে ফেলে ওই যুবক। ওইদিন মামণি ফোন না ধরায় চিন্তিত হয়ে বাড়ি ঢুকেছিল দেবাশিস। ঠিক তখনই খুন করে বেরিয়ে যাচ্ছিল অর্জুন। পূর্ব পরিচয়ে অর্জুনের সঙ্গে কথাও হয় দেবাশিসের। সে জানায় এখনই আসছে। তারপর সে বেপাত্তা হয়ে যায়। অন্যদিকে, দোতলার ঘরে ঢুকে দেবাশিস তাঁর স্ত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেন। সন্দেহ হওয়ায় অর্জুনের কথা পুলিশকে জানায় নিহতের পরিবার। এরপর শুরু হয় তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে নিয়ে তদন্ত। পুলিশ জানতে পারে অপরাধের পর অর্জুন দুর্গাপুর যায়। সেখান থেকে হাওড়া হয়ে ট্রেনে করে গুজরাটের সুরাট। সেখান থেকেই অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তকে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *