বিতর্কের জেরে পিছু হটল পুরসভা, শান্তিনিকেতনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ

বিতর্কের জেরে পিছু হটল পুরসভা, শান্তিনিকেতনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ

স্বাস্থ্য/HEALTH
Spread the love


দেব গোস্বামী, বোলপুর: দরজায় ঝুলল তালা, বিতর্কের মুখে পড়ে পিছু হঠে শান্তিনিকেতনে অবনীন্দ্র ঠাকুরের বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ করল বোলপুর পুরসভা। ইতিমধ্যে এনিয়ে জেলাশাসক পুরসভা এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে। বিষয়টি সরেজমিনে দেখার পর রিপোর্ট তৈরিতে ব্যস্ত ভূমি দপ্তরের আধিকারিকরা। এসবের মাঝে বৃহস্পতিবার পুরসভা কর্তৃপক্ষ আপাতত বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী দিনে পুরসভা কর্তৃপক্ষ ২২টি ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি পুর সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসতে চলেছে। কীভাবে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব, তা নিয়ে আলোচনা হবে। জেলা প্রশাসন ও সর্বোচ্চ আধিকারিকদের সঙ্গেও আলোচনা সাপেক্ষে অবন পল্লিতে শিল্পীর এই ‘আবাস’ নামক বাড়িটি আদৌ কীভাবে রক্ষা করা যায়।

অবনীন্দ্র ঠাকুরের বাড়িটি এখন ভগ্নস্তূপ। নিজস্ব চিত্র।

প্রায় মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া কয়েক দশকের ঐতিহ্যমণ্ডিত বাড়ি ভাঙা নিয়ে ক্ষোভ, আক্ষেপ তৈরি হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকদের মধ্যে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিবারের ব্যক্তিগত রায়তি জমি সম্পত্তি হলেও কী কারণে বাড়িটি বিক্রি করতে হল? সেই প্রশ্ন উঠেছে। ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িটি বিক্রি নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে শান্তিনিকেতন। ভবিষ্যতে ঐতিহ্য পুনরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব কিনা, তাও বড় প্রশ্ন। বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকদের মত, প্রয়োজনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অথবা রাজ্য তথা জেলা প্রশাসনকে সংরক্ষণের জন্য হেরিটেজ রক্ষার স্বার্থেই ভাবনা চিন্তা উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারতেন। তা না করে বাণিজ্যিক মুনাফা লোভীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী ভবন সংরক্ষণের জন্যই যথাযথ ব্যবস্থা প্রয়োজন।

বোলপুর পুরসভার পুরপ্রধান পর্ণা ঘোষ জানান, “যাঁরা ঐতিহ্যমণ্ডিত বাড়িটি ভাঙতে শুরু করেছিলেন তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আপাতত বাড়িতেই ভেঙে ফেলা যাবে না। এছাড়াও বাড়িটির মূল গেটের তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু এই বাড়িটি নয়। এর পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলির দিকেও নজরদারি চালাবে পুরসভা কর্তৃপক্ষ।” ঠাকুর পরিবারের সদস্য প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরের কথায়, “বিশ্বভারতী জুড়ে অনেক কিছুই ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঐতিহ্য তুলে ধরা অথবা সংস্কার করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেই কারও। যিনি ক্রয় করেছেন তিনিও এই বাড়িটির মূল্যই বোঝেন না। স্থানীয় প্রশাসন সহ জেলা প্রশাসনের নজরদারির প্রয়োজন।” অন্যদিকে প্রবীণ আশ্রমিক কল্পিকা মুখোপাধ্যায় জানান, “অত্যন্ত আক্ষেপের। খুবই কষ্ট পেয়েছি। যখন দেখেছি ইতিহাস বিজড়িত বাড়িটি ভাড়া হচ্ছে। অবনীন্দ্রনাথ তিনি নিজে এই বাড়িতে থেকেছেন। দুঃখ করা ছাড়া উপায় কী?” প্রতিবেশী সুব্রত সেন মজুমদার বলছেন, “অবশেষে বোলপুর পুরসভা এই বাড়িটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে পদক্ষেপ নিচ্ছেন কিছুটা হলেও আশা জাগছে। ভবিষ্যতেও হেরিটেজ বাড়িগুলির রক্ষা করবেন। তাহলে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে।”

‘আবাস’-এ তালা, বন্ধ ভাঙা। নিজস্ব ছবি।

তবে বাড়ি সমেত বিক্রি হওয়া জমিটি ক্রয় করেন উত্তর ২৪ পরগনার রাজারহাট গোপালপুরের বাসিন্দা প্রীতম নন্দী ও চন্দন কুমার রায়। এ বিষয়ে তাঁদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ঐতিহ্যগুলি যাতে নষ্ট না হয়। যা নিয়ে রীতিমতো আক্ষেপ, ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক, প্রাক্তনী, প্রবীণ আশ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে৷ এখন দেখার, সরেজমিনে পুনর্মূল্যায়ন করে পরবর্তী কী সিদ্ধান্ত নেয় বোলপুর পুরসভা কর্তৃপক্ষ অথবা শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ সহ জেলা প্রশাসন সেদিকেই তাকিয়ে সকলেই।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *