অর্ণব আইচ: পুজোর আর দু’মাসও বাকি নেই। তার আগেই ভ্রমণপিপাসুদের অভিনব পদ্ধতিতে ফাঁদে ফেলছে সাইবার জালিয়াতরা। রীতিমতো ফোন করে বিলাসবহুল হোটেল বুক করার নামে ফাঁদ পেতে জালিয়াতির ছক কষতে শুরু করে দিয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, এর আগেও দেশের বিভিন্ন পর্যটনস্থল, বিশেষ করে পুরীতে হোটেল বুকিং করার সময় জালিয়াতদের ফাঁদে পড়ে অনেক ভ্রমণপিপাসুই প্রচুর টাকা খুইয়েছেন।
সম্প্রতি পুরীতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য সাত হাজার টাকা দিয়ে হোটেল বুকিং করতে গিয়ে ৭০ হাজার টাকা প্রতারিত হয়েছেন পর্ণশ্রীর এক বাসিন্দা। এবার শুধু দেশে নয়, বিদেশে হোটেল বুকিং করার ক্ষেত্রেও যে সাইবার জালিয়াতরা ফাঁদ পেতেছে, এমন কিছু অভিযোগ এসেছে পুলিশের হাতে। এটিকে সাইবার জালিয়াতদের ‘অনলাইন ফাইভ স্টার স্ক্যাম’ বলছে পুলিশ। সূত্রের খবর, শুধু লালবাজারের গোয়েন্দা নয়, রাজ্য পুলিশও এই ব্যাপারে সতর্ক করতে শুরু করেছে। মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে এই সতর্কতার প্রচার।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, যাঁরা দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন শহর ও পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণের জন্য হোটেল বুকিং করার চেষ্টা করছেন, তাঁরাই হয়ে উঠছেন ওই সাইবার জালিয়াতদের টার্গেট। অনেকেই অনলাইন তথা সার্চ ইঞ্জিনগুলিতে হোটেলের খোঁজ করেন। অনেক ক্ষেত্রেই নামী হোটেলের ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে রাখে জালিয়াতরা। সেখানে দেওয়া থাকে তাদের নম্বর। যে ভ্রমণকারীরা হোটেল বুক করেন, তাঁরা ওই ভুয়া ওয়েবসাইটে দেওয়া জালিয়াতদের নম্বরে ফোন করলেই বিপদে পড়েন। আবার অনেক সময়ই জালিয়াতরা এভাবেই অনলাইনে নজর রাখে, কারা কন্টিনেন্টাল হোটেল বা চার অথবা পাঁচতারা হোটেলে রুম খোঁজার চেষ্টা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও তারা সেই তথ্য জানার চেষ্টা করে। বহু হোটেলের নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেয় জালিয়াতরা। বিশেষ করে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ টাকা ছাড় দেওয়ার টোপ দেওয়াও হয়।
অনেক ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরে সাইবার জালিয়াতরা নিজেরাই ফোন করে পর্যটকদের। কখনও তারা নিজেদের কোনও পর্যটন সংস্থা, আবার কখনও বা অভিজাত হোটেলের আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে বলে, যেহেতু পর্যটক হোটেলের রুম খুঁজছেন, তাই সে তাঁকে সাহায্য করতে চায়। ভ্রমণপিপাসু পর্যটক কোনওভাবে তাতে সাড়া দিলে জালিয়াত কথা বলতে বলতেই কোনওভাবে জেনে নেয় তিনি কোথায় যাচ্ছেন। এরপর ওই ব্যক্তিকে জালিয়াত জানায়, তাঁকে কষ্ট করতে হবে না। তিনি তথ্য দিলেই ফর্ম পূরণ করে দেওয়া হবে। শুধু বুকিং ‘কনফার্ম’ করার জন্য তাঁকে একটি কিউ আর কোড পাঠানো হবে। তাঁকে সেই কিউ আর কোড স্ক্যান করতে হবে ও কয়েকটি ওটিপি তাঁর ফোনে যাবে, সেগুলি শেয়ার করতে হবে। বুকিংয়ের জন্য হাজার দশেক টাকাও চাওয়া হয়। ওই টাকা অনলাইনে পাঠানোর পরই পর্যটকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে পর পর বিপুল টাকা হাতানোর চেষ্টা করে জালিয়াতরা।
পুলিশের সতর্কবার্তা, যদি হোটেল বুকিং করার নাম করে পর্যটকদের ফোনও করা হয়, সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা যেন কথা বলা বন্ধ করে দেন। তাদের চাহিদামতো তাঁরা যেন কোনও কিছুই না পাঠান, অথবা কোনও কিউ আর কোড স্ক্যান না করেন। পুজোর আগে সাইবার জালিয়াতদের এই ‘ফাইভ স্টার স্ক্যাম’ রুখতে আরও জোরদার প্রচার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন