সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পহেলগাঁও হামলার পরে কার্যত রণংদেহি মেজাজে ভারত ও পাকিস্তান। একের পর এক পদক্ষেপ করছে দু’দেশই। সব মিলিয়ে ঘনাচ্ছে যুদ্ধের কালো মেঘ। এই পরিস্থিতিতে দিল্লি-ইসলামাবাদ দু’জনকেই সংযত হওয়ার আর্জি জানাল রাষ্ট্রসংঘ।
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ ভ্যালিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। ২৫ পর্যটক ও এক স্থানীয় যুবককে গুলিতে ঝাঁজরা করে দেয় তারা। এই নারকীয় ঘটনা নিয়ে কথা বলতে গিয়েই রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, “পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় আমরা শোকাহত। কিন্তু ভারত আর পাকিস্তানকে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে আসতে হবে। মহাসচিব গোটা পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছেন। ভারত আর পাকিস্তান দু’দেশের সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে না যায়।” পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল নিয়ে ডুজারিক বলেন, “আমরা ফের আবেদন করছি। এমন কিছু করবেন না যাতে উত্তেজনা আরও বাড়ে।”
পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর হামলার পরেই বৈঠকে বসে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে এই বৈঠক চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে। তারপরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিদেশসচিব বিক্রম মিসরি বলেন, সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করছে ভারত। এছাড়াও অবিলম্বে বন্ধ করা হবে ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত। পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করা হবে এবং বর্তমানে যেসব পাকিস্তানিরা ভারতে রয়েছেন তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে। এছাড়াও ভারত এবং পাকিস্তান-দুই দেশের হাই কমিশন থেকেই সরিয়ে নেওয়া হবে সামরিক পরামর্শদাতাদের।
ভারতের এই সিদ্ধান্তের পালটা দিতে বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ভারতের পথে হেঁটেই বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ। ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ, ভারতীয়দের জন্য় পাক ভিসা বাতিল, হাইকমিশনের কর্মী প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছে ইসলামাদ। তবে ভারত থেকে পাকিস্তানে যাওয়া শিখ পুণ্যার্থীদের ছাড় দেওয়া হবে। এছাড়াও পাকিস্তানের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্য বন্ধ করা হল। তৃতীয় কোনও দেশের মাধ্যমেও ভারত-পাকিস্তান বাণিজ্য চলবে না। শিমলা চুক্তি-সহ অন্যান্য বাণিজ্যিক চুক্তিও বাতিল করা হল। ভারত অধিকৃত বা নিয়ন্ত্রিত উড়ান সংস্থার বিমানগুলি পাক আকাশসীমায় ঢুকতে পারবে না। সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল যুদ্ধ ঘোষণার সমান, একথা বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। পহেলগাঁও হামলায় পাকিস্তানের উপর দোষ চাপিয়ে সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করছে ভারত, এমনটাই দাবি ইসলামাবাদের।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একেবারে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদকে সমূলে উৎখাত করবে ভারত। সন্ত্রাসবাদীরা যে প্রান্তেই থাক তাদের খুঁজে বের করে মারা হবে। প্রধানমন্ত্রী যখন একথা বলছেন, ততক্ষণে কাশ্মীরজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে চিরুনি তল্লাশি। বারামুলা, উধমপুরে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই অভিযান চালাচ্ছে সেনা। শুক্রবার ভোর থেকে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে বান্দিপোরায়। সেখানে সেনা অভিযানে নিকেশ হয়েছে শীর্ষ লস্কর জঙ্গি। মৃত আলতাফ লালি কাশ্মীরে লস্করের অন্যতম কমান্ডার এবং রিক্রুটার ছিল বলে খবর। পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে লালির সরাসরি যোগ ছিল কিনা খতিয়ে দেখছে সেনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন