পর্যটন ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ভাঁড়ার সমৃদ্ধ

পর্যটন ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ভাঁড়ার সমৃদ্ধ

শিক্ষা
Spread the love


  • তিতীর্ষা জোয়ারদার

গরম বা শীতের ছুটি মানেই, ভ্রমণের হাতছানি। সেক্ষেত্রে পছন্দের ট্রাভেল স্পট হিসেবে বহু মানুষের কাছেই উত্তরবঙ্গ হট ফেভারিট। ডুয়ার্সের ওয়াইল্ডলাইফ সাফারি হোক বা দার্জিলিংয়ে ম্যাল, পর্যটনে উত্তরবঙ্গ অনেকটা এগিয়ে। কমন ডেস্টিনেশন ছাড়াও অফবিট জায়গাগুলি ইদানীং পর্যটকের নজর কাড়ছে বেশি।

বলাবাহুল্য, পাহাড়, নদী এবং জঙ্গল দিয়ে ঘেরা উত্তরের এই পর্যটন, এর বাইরেও তার কিছু পরিচয় আছে। পশ্চিমবাংলার প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি কিংবা পর্যটনশিল্পে এ অঞ্চলের মাহাত্ম্যকে বাদ দিলেও, ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক, দুইদিক থেকেই এর গুরুত্ব আছে। শিলিগুড়ি করিডর বা চিকেনস নেক প্রসঙ্গটা মাঝে মাঝেই খবরের শিরোনামে আসে। সাম্প্রতিককালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আবহেও চিকেনস নেক নিয়ে আলোচনা ছিল খবরের শিরোনামে। পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা, আমদানি-রপ্তানির কারণে শিলিগুড়ির ব্যবসায়িক গুরুত্ব অনেকটাই। নেপাল, চিন এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমারেখার কাছাকাছি আছি আমরা। তাই আমার ধারণা, যখনই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধের টেনশন তৈরি হবে, শিলিগুড়ির নাম আলোচনায় চলে আসবে বারবার।

শিলিগুড়িকে অনেকে ব্যবসার শহর বলেন। ব্যবসার কারণে দেশের কিংবা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ এখানে আসেন, ফলে লক্ষ করলে বোঝা যাবে শিলিগুড়িতে হোটেল ব্যবসার রমরমা আছে। এছাড়া চা এবং কাঠের ব্যবসায় একটা বৃহৎ অংশে উত্তরবঙ্গের অবদান তো সুবিদিত। তবে চা বলতেই অনেকে ভাবেন দার্জিলিং-এর কথা, দার্জিলিং ছাড়াও, পাহাড়ের ও তরাইয়ের বহু চা বাগানের যথেষ্ট সুনাম আছে।

লিখতে গিয়ে আমার মনের খুব কাছের জেলা মালদার কথা চলেই আসবে। মালদা জেলার আমের ব্যবসার কথা সকলেই জানেন, প্রসিদ্ধির কারণে ওখানকার আম চলে যায় দেশ এবং বিদেশের বহু প্রান্তে। তবে আমের বাইরেও মালদা সংলগ্ন গৌড়, আদিনার অবস্থানের আলাদা গুরুত্ব আছে। ফলে মালদা জেলা ঐতিহাসিক দিক থেকে এক বিশেষ জায়গা  পেয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই।

তবে উত্তরবঙ্গের বাকি অংশে পর্যটনশিল্প বেড়ে উঠলেও, সমৃদ্ধ এই মালদা শহরে এই শিল্প তুলনামূলকভাবে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের যে নদীগুলিকে দেখে আমরা বড় হলাম, তিস্তা, মহানন্দা, তোর্ষা, জলঢাকা, রায়ডাক, সংকোশ, কালজানি, মেচি কিংবা আরও বহু নদী, ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যাবে উত্তরবঙ্গের সমাজ ও লোকসংস্কৃতির অনেকখানি ভিত দাঁড়িয়ে আছে এদের ওপর। প্রথমবার তিস্তা নদী কেউ দেখলে, তার মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি জন্মায়, তিস্তা নদীকে কেন এই অঞ্চলের জীবনরেখা বলা হয়, সেটা বোঝা যায়। নদী ছাড়াও পাহাড় উত্তরবঙ্গের জলবায়ুর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ভুলে গেলে চলবে না, পাহাড়ের ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণেই কিন্তু ইংরেজদের নজর কেড়েছিল উত্তরবঙ্গ।

বিভিন্ন ভাষা এবং উপভাষার অবস্থান রয়েছে উত্তরবঙ্গে। বহু জাতি এবং সংস্কৃতির পীঠস্থান উত্তরবঙ্গ। উত্তরবঙ্গের রাজবংশী ভাষার ইতিহাস এবং গুরুত্বও অনস্বীকার্য। কোচবিহারের ভাওয়াইয়া গান হোক বা মালদার গম্ভীরার কথা ভাবলেই তা মনে আনন্দ দেয়। উত্তরবঙ্গকে ঘিরে এত কিছুর প্রসঙ্গ আমার এই লেখায় আনলাম কেন? তার কারণ আমার মনে হয়, উত্তরবঙ্গ যতখানি গুরুত্ব পায় তার থেকে আরও বেশি গুরুত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রাখে। শুধু পর্যটন নয়, উত্তরবঙ্গের বহু অনালোচিত দিক নিয়েও কথা হোক, ভাবা হোক, এইটুকুই চাওয়ার।

(লেখক গবেষণা করছেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা)  



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *