নেপালে ধ্বংসলীলা, দীর্ঘদিনের অপশাসনের ফল?

নেপালে ধ্বংসলীলা, দীর্ঘদিনের অপশাসনের ফল?

বৈশিষ্ট্যযুক্ত/FEATURED
Spread the love


নেপালে যে জনরোষ এবং বিপ্লবের আগুন জ্বলে উঠেছে, তা দীর্ঘদিনের অপশাসনের ফল। কিন্তু তারপরেও আসবে কি প্রার্থিত পরিবর্তন?

যুগে যুগে লুকিয়ে আছে পাতাল ছায়ায়। এক আদিম আগুন। ফুটন্ত অনন্ত শক্তি অন্ধকার অন্তরালে। কিন্তু একদিন ভাঙে ধৈর্য। সহিষ্ণুতা পৌঁছয় শেষ বিন্দুতে। জাগ্রত হয় আগ্নেয়গিরি। বিপুল তোড়ে নেমে আসে বহ্নিত লাভা। চারিদিক ছারখার করতে-করতে। দহন আর মরণ ছড়াতে ছড়াতে। তৈরি করতে-করতে অন্ধ আবেগ আর ক্রোধ-প্রসূত ধ্বংসস্তূপ। ইতিহাসের পাতায় জনরোষের এই ছবি ফুটে উঠেছে বারবার। এবং বারবার এই বাঁধভাঙা রোষের প্রকাশে থেকেছে অভু‌্যত্থানের অঙ্গীকার। পরিবর্তনের শপথ।

সম্প্রতি সমস্ত নেপাল জুড়ে, এবং বিশেষ করে রাজধানী কাঠমান্ডুতে যে জনরোষ এবং বিপ্লবের রূপ দেখা দিল, তা যেন আপাতভাবে এক আকস্মিক বিস্ফোরণ। কিন্তু তা তো নয়! এই জনজাগৃতির শিকড় ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছিল আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবের অনেক গভীরে। নেপালের সাধারণ মানুষ ক্রমশ দগ্ধ হচ্ছিল দুঃশাসনের আগুনে-অনাচারে। তাদের আর্থিক অবনতি ক্রমশ পৌঁছেছে অসহনীয় অবস্থায়। কর্মহীনতার বিপর্যয়ে সারা নেপাল আক্রান্ত। বেশিরভাগ সংসারেই পায়ের তলায় মাটি নেই।

সামনে নেই কোনও সুরাহার আশা। নেই কোনও অস্পষ্ট সুদূরেও পরিত্রাণের সম্ভাবনা। নেপাল মানেই যেন কিছু ধনী মানুষের অফুরন্ত আহ্লাদ, কালো টাকার নিরাপদ পরিসর। আর পাশাপাশি গরিবির অফুরন্ত যন্ত্রণা, অপমান, বিপর্যয়। কমিউনিস্ট শাসন নেপালে এসেছিল গরিব মানুষের বন্ধু হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। অথচ, সেই শাসনকালেই গরিব তলিয়ে গেল আরও অন্ধকারে। অার ধনীরা আরও ধনী হল অপশাসন, শোষণ ও কপট উপার্জনের সৌজনে‌্য। মানুষ ক্রমশ বুঝতে পারল, তাদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে আর নেই সহিষ্ণুতার পরিসর। কেঁপে উঠল জনরোষের আগ্নেয়গিরি। ক্রমশ নেপাল জুড়ে ঘটল বিস্ফোরণ।

২০২২-এ শ্রীলঙ্কায় জনজাগরণের পর, সম্প্রতি বাংলাদেশে জন-অভু‌্যত্থানের পর, আর এক জনরোষের প্রকাশ দেখলাম আমরা নেপালে। সেই সঙ্গে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি। অনন্ত, এই জনরোষের মূলে কাজ করেছে নতুন সূচনার আদর্শ ও প্রেরণা। সমস্ত জনরোষের আগুন, দহন, ধ্বংস ও প্রকাশ নিয়ে আসে কি প্রার্থিত পরিবর্তন? কাঙ্ক্ষিত সুশাসন? স্বপ্নের স্বর্ণযুগ? এক অপশাসন সরতে না সরতে কি সূত্রপাত হয় না অন‌্য অপশাসনের? এক গভীরতর তলানি তৈরি হয়। এমন কোনও সমাজ-সভ‌্যতা আছে কি, যার তলানি নেই? নেই আশাহীন অন্ধকার? নেই লজ্জার আড়াল?

অপশাসনের বিপ্লব ঘটেছে যুগে যুগে। নতুন শাসনের শুরুও হয়েছে। কিন্তু সেই অভু‌্যত্থান ও পরিবর্তন, তার মধে‌্যই বহন করেছে অবক্ষয় ও পতনের বীজ। শোষণহীন শাসন শুধু সম্ভব রূপকথার ইউটোপিয়ায়? কিন্তু পৃথিবীতে? অসম্ভব! তবু জনরোষের বিস্ফোরণ ঘটতেই থাকবে। ওটাই মানুষ যে বেঁচে আছে, তারই প্রতীকী প্রকাশ!



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *