নগ্নতার প্রচার। এই অভিযোগে কলম্বিয়ার অ্যাডাল্ট সিনেমার অভিনেত্রীর ইনস্টা অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছিল মেটা। আদালত এর বিরুদ্ধে।
নগ্নতা সেই আগুন, যাকে নিয়ে লোফালুফি করার বাসনা যেমন শাশ্বত, তেমনই তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারার বেদনাও চিরকালীন। এসপারানজা গোমেজ কলম্বিয়ার অ্যাডাল্ট সিনেমার একজন প্রসিদ্ধ অভিনেত্রী। অভিযোগ, ইনস্টাগ্রামে অন্তর্বাস-শোভিতা ছবি ‘পোস্ট’ করেছিলেন, এবং মেটা, যার অধীনে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম, এসপারানজা গোমেজের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। কেননা, মেটার যুক্তি ছিল, এর ফলে নগ্নতার খোলামেলা প্রচার ঘটছে, যা কোম্পানির প্রাইভেসি পলিসির খেলাপি। মিস গোমেজ এরপর কলম্বিয়ার সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের দ্বারস্থ হন, আর যে-পর্যবেক্ষণ কলম্বিয়ার সর্বোচ্চ আদালতের তরফে এসেছে, তা প্রণিধানযোগ্য। অ্যাডাল্ট কনটেন্টের সঙ্গে এসপারানজা গোমেজের সম্পর্কটি যে প্রখরভাবে পেশাগত, তা আদালত মেনে নিয়েছে।
মিস গোমেজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ‘ফলো’ করেন প্রায় ৫০ লক্ষ অনুরাগী। হঠাৎ করে অ্যাকাউন্টটি উধাও হয়ে যাওয়ার ফলে পেশার জগতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন– এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন গোমেজ, এবং দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় সেই কথার সমর্থনে জানিয়েছে যে, মেটা যা করেছে তা যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ যুক্তির উপরে অধিষ্ঠিত নয়। মেটার মতো টেকদৈত্যর যেমন নিজস্ব প্রাইভেসি পলিসি রয়েছে, তেমনই এসপারানজা গোমেজের রয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন। তারই অঙ্গ ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমে ছবি ‘পোস্ট’ করা। মেটা কোনওভাবেই প্রাইভেসি পলিসির স্বার্থে কারও মতপ্রকাশের ব্যক্তিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না, হলেনই-বা তিনি অ্যাডাল্ট অভিনেত্রী! বলা হয়েছে, মেটা যেন নিজস্ব পলিসি নতুন করে খতিয়ে দেখে।
এই রায়ে অ্যাডাল্ট ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত নারী-পুরুষের পেশাপরিচয়কে মর্যাদা ও সুরক্ষাকবচ দেওয়া হল। অ্যাডাল্ট কনটেন্ট অ্যাকট্রেসের ছবি মানেই তা চিত্তদূষণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে, এমন নয়। বস্তুত, ইনস্টাগ্রাম যঁারা নিয়মিত ব্যবহার করেন, তঁাদের একটি অংশের মত, চটজলদি লোকপ্রিয়তার মোহে এমন ধরনের ‘কনটেন্ট’ সেখানে প্রতিনিয়ত ‘পোস্ট’ করা হয়, যা অশালীন ও রুচিবহির্ভূত। এই প্রবণতা রিল্সের বেলায় সবচেয়ে বেশি করে চোখে পড়ে। যঁারা সেসব কনটেন্ট ইনস্টায় পোস্ট করেন, অধিকাংশই ঘোষিতভাবে অ্যাডাল্ট ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত নন, তাছাড়া এক-এক দেশে অ্যাডাল্ট কনটেন্টের পরিবেশনাকে এক-একরকমভাবে দেখা হয়। কিন্তু এরপরেও যেটা বলার, যদি কোনও যৌনগন্ধী পোস্ট অপব্যবহারের কারণে রুচির সীমা লঙ্ঘন করে, তখন কি ইনস্টাগ্রামের প্রাইভেসি পলিসি আক্রান্ত হয় না?
একজন অভিনেত্রী অ্যাডাল্ট সিনেমার জগতের জড়িয়ে আছেন বলেই কি ‘সফট টার্গেট’ বলে পরিগণিত হলেন? যৌনতার প্রকাশ ও অভিব্যক্তি চিরকাল সমাজকে আন্দোলিত ও উদ্বেলিত করেছে। এ কারণেই যৌনতা আগুনসম। কিন্তু ঝিকে ঠেঙিয়ে বউকে শিক্ষা দেওয়ার ছলনা কি প্রগতিশীল ভাবনার পরিচয় হতে পারে?