দায়বদ্ধতার অভাব

দায়বদ্ধতার অভাব

খেলাধুলা/SPORTS
Spread the love


সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি শেষমেশ খারিজই করে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজিজু ঘোষণা করেছেন, সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হবে ২১ জুলাই। ‘ইন্ডিয়া’ জোটভুক্ত ১৬টি দল পহলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা, অপারেশন সিঁদুর ও তার পরবর্তী পরিস্থিতি আলোচনার দাবিতে বিশেষ অধিবেশন ডাকার আর্জি জানিয়েছিল। জোটের তরফে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও লেখা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সাড়া দেয়নি।

উলটে ওই চিঠি পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের বাদল অধিবেশনের দিনক্ষণ ঘোষণায় পরিষ্কার যে, বিদেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা থাকলেও এই সরকার আদতে বিরোধী মতকে উপেক্ষাই করছে। সরকারের যুক্তি, যেহেতু বাদল অধিবেশন আসন্ন, তাই অহেতুক বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে পালটা প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, তাহলে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল না পাঠিয়ে শুধু বিদেশমন্ত্রী, বিদেশসচিব এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-আমলাদের বিশ্বের অন্য দেশে দৌত্য করতে পাঠালেই তো হত।

আসলে যে উদ্দেশ্যে শাসক ও বিরোধীপক্ষের ৫৯ জন প্রতিনিধিকে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল, সেই একই উদ্দেশ্যে বিশেষ অধিবেশনের আর্জি যুক্তিসংগত। তাতে দেশের মানুষের কাছে বার্তা যেত, পহলগাম ও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সরকার সংসদকে অবহিত করেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত পর্বে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে, নানারকম সংশয়ও তৈরি হয়েছে। বাদল অধিবেশনে প্রশ্নগুলি তোলার অবকাশ রয়েছে বৈকি। কিন্তু বিরোধীরা ততদিন অপেক্ষা না করে বিশেষ অধিবেশন ডাকার পক্ষপাতী।

বিরোধীদের যুক্তি, বিশেষ অধিবেশনে সরকার প্রশ্নগুলির উত্তর দিলে প্রমাণ হত যে, দেশবাসীকে অন্ধকারে রেখে তারা কিছু করেনি। পহলগামে হামলা এবং অপারেশন সিঁদুর নিয়ে এমন কিছু প্রশ্ন উঠেছে, যেগুলির উত্তর শুধু সরকারই দিতে পারে। যেমন পহলগামে ২৬ জন নিরপরাধ নাগরিককে খুনের পর এক মাসেরও বেশি সময় কেটে গেলেও সন্ত্রাসবাদীদের এখনও ধরা গেল না কেন? জম্মু ও কাশ্মীরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয় ভেদ করে জঙ্গিরা কীভাবে ঢুকল এবং পালিয়েই গেল কীভাবে? পাকিস্তানের হামলায় ভারতের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়ার অভিযোগ প্রথমে মানতে না চাইলেও পরে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহানের সিঙ্গাপুরে একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমে স্বীকার করার পেছনে রহস্যটা কী?

প্রশ্নটা আগেই তুলেছিলেন রাহুল গান্ধি। অপারেশন সিঁদুরের পর বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর পাকিস্তানকে বিষয়টি কেন জানিয়েছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন করেন তিনি। সেই সময় রাহুল পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলছেন বলে সমালোচনা করেছিল বিজেপি। শেষপর্যন্ত বিমান ধ্বংস বড় কথা নয় বলে প্রশ্নটিকে লঘু করে দেখাতে চেয়েছেন সিডিএস।

তাঁর যুক্তি, সেনাবাহিনী কখনও ধাক্কা, পরাজয়, ব্যর্থতা নিয়ে মাথা ঘামায় না। সেনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল সাফল্য ও পরিণাম। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে বায়ুসেনা আরও নিখুঁতভাবে কাজ করেছে বলে দাবি করছেন সিডিএস। বাস্তবে অপারেশন সিঁদুর ও পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে কখনও সরকার, কখনও সেনার দেওয়া তথ্যে মানুষ বিভ্রান্তই হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষ বিরতির কৃতিত্ব দাবি করলেও ভারত মানে না।

তাহলে প্রকৃত সত্যটা কী? সেটা জানার অধিকার দেশবাসীর নিশ্চয়ই আছে। বিশেষ অধিবেশনে সেগুলি জানালে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতার পাল্লাই ভারী হত। বিদেশে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে ইতিমধ্যে দেশের অবস্থান তুলে ধরছে সরকার। নির্বাচিত সরকার সবসময়ই সংসদের প্রতি দায়বদ্ধ। পহলগামে হামলা ও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনা করতে বিশেষ অধিবেশন না ডেকে তাই নিজেদের দ্বিচারিতা প্রকট করল কেন্দ্র।

এমন মানসিকতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। দেশবাসীকে ধন্দে রেখে শুধু বিজেপির দেশজুড়ে প্রচারে তাই নিছক দলীয় রাজনৈতিক লাভক্ষতির হিসেব কষা হয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।

The submit দায়বদ্ধতার অভাব appeared first on Uttarbanga Sambad.



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *